ফিফা বিশ্বকাপ (ইংরেজি: FIFA World Cup)
(ফুটবল বিশ্বকাপ, সকার বিশ্বকাপ, অথবা শুধু বিশ্বকাপ নামেও পরিচিত) একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা যেখানে ফিফা (ফরাসি: FIFA বা Fédération
Internationale de Football Association — উচ্চারণ:
ফেদেরাসিওঁ অ্যাঁতের্নাসিওনাল্ দ্য ফুৎবল্ আসোসিয়াসিওঁ, অর্থাৎ "আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা") সহযোগী দেশগুলোর পুরুষ জাতীয় ফুটবল দল অংশ নেয়।
ফিফা বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। ১৯৩০ সালে এই প্রতিযোগিতা শুরু
হয় এবং এখন পর্যন্ত চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত
হচ্ছে। মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে
এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি।
প্রতিযোগিতাটি
দুটি ভাগে বিভক্ত, বাছাইপর্ব ও চূড়ান্ত পর্ব
(মূল বিশ্বকাপ)। চুড়ান্ত পর্যায়ে
কোন দল খেলবে তা
নির্বাচনের জন্য অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে বাছাইপর্বে অংশ নিতে হয়। বর্তমানে মূল বিশ্বকাপের আগের তিন বছর ধরে প্রতিযোগিতার বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার বর্তমান ধরন অনুযায়ী ৩২টি জাতীয় দল চূড়ান্ত পর্বে
অংশ নেয়। আয়োজক দেশে প্রায় একমাস ধরে এই চূড়ান্ত পর্বের
প্রতিযোগিতা চলে। দর্শক সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বকাপ মূল পর্ব বিশ্বের বৃহত্তম অনুষ্ঠান। ফিফার হিসেব অনুযায়ী ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দেখেছেন প্রায় ৭১৫.১ মিলিয়ন দর্শক।
এ
পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ২১টি আসরে কেবল ৮টি জাতীয় দল বিশ্বকাপ শিরোপা
জিতেছে। বর্তমান শিরোপাধারী চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স । দ্বিতীয়বার জয়ী
১৯৯৮ , ২০১৮ । ৫ বার
বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল হচ্ছে বিশ্বকাপের সফলতম দল। জার্মানি ও ইতালি ৪টি
শিরোপা নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। অন্যান্যদের মধ্যে উরুগুয়ে ২টি শিরোপা প্রথম(১৯৩০) ও চতুর্থ (১৯৫০)
বিশ্বকাপ জয়ী, আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স দু’বার করে এবং ইংল্যান্ড ও স্পেন একবার
করে শিরোপা জিতেছে।
সর্বশেষ
বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে রাশিয়ায়, ২০১৮ সালের ১৪ জুন থেকে
১৫ জুলাই পর্যন্ত। এই বিশ্বকাপে ফ্রান্স
ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে ৪-২ গোলে
পরাজিত করে শিরোপা জিতে নেয়।
১৯৯১
সাল থেকে ফিফা ফিফা মহিলা বিশ্বকাপ আয়োজন শুরু করেছে। এটিও সাধারণ বিশ্বকাপের ন্যায় চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত
হয়।
পূর্ববর্তী আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা :-
বিশ্বের
প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা হয়েছিল ১৮৭২ সালে স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মধ্যে।
প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল ১৮৮৪ সালে শুরু হওয়া ব্রিটিশ হোম চ্যাম্পিয়নশিপ। এ সময়ে গ্রেট
ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের বাইরে
ফুটবল খেলা বলতে গেলে অনুষ্ঠিতই হত না। সেই
শতাব্দীর শেষের দিকে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এটিকে ১৯০০, ১৯০৪ ও ১৯০৬ সালের
অলিম্পিকে প্রদর্শনী খেলা হিসেবে রাখা হয় তবে এর জন্য কোন
পুরস্কার বরাদ্দ ছিল না। ১৯০৮ সালের অলিম্পিকে ফুটবল প্রথম আনুষ্ঠানিক খেলার মর্যাদা পায়।
এফএ’র পরিকল্পনা অনুযায়ী
এই প্রতিযোগিতা ছিল অপেশাদার খেলোয়াড়দের জন্য এবং এটিকে প্রতিযোগিতার চেয়ে প্রদর্শনী হিসেবেই সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হত। ১৯০৮ ও ১৯১২ দু’টি অলিম্পিকেই গ্রেট
ব্রিটেন (যাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিল ইংল্যান্ড জাতীয় অপেশাদার ফুটবল দল) জয়লাভ করে।
১৯০৪
সালে ফিফা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঠিক পরেই, ১৯০৬ সালে ফিফা সুইজারল্যান্ডে অলিম্পিকের আদল থেকে ভিন্ন একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক ফুটবলের বয়স তখনো অনেক কম এবং হয়ত
একারণেই ফিফার ইতিহাসে এই প্রতিযোগিতাকে ব্যর্থ
আখ্যা দেয়া হয়েছে।
অলিম্পিকে
অপেশাদার দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলার পাশাপাশি স্যার থমাস লিপটন ১৯০৯ সালে তুরিনে স্যার থমাস লিপটন ট্রফি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। এটি ছিল বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ক্লাবের (জাতীয় দল নয়) মধ্যে
একটি চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা। এসব দলের প্রত্যেকে আলাদা আলাদা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল, এজন্য এই প্রতিযোগিতাকে অনেকে
প্রথম বিশ্বকাপ বলেন। এতে ইতালি, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দেশের
খ্যাতনামা পেশাদার দল অংশ নেয়।
কিন্তু
ইংল্যান্ডের দ্য ফুটবল এসোসিয়েশন এই প্রতিযোগিতার সাথে
জড়িত থাকতে ও পেশাদার দল
পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য লিপটন পশ্চিম অকল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানান যা ছিল ডারহাম
কাউন্টির একটি অপেশাদার দল। পশ্চিম অকল্যান্ড এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী
হয় এবং পরবর্তীতে ১৯১১ সালের প্রতিযোগিতায় শিরোপা ধরে রাখতে সমর্থ হয়। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুসারে তাদেরকে চিরতরে ট্রফিটি দিয়ে দেয়া হয়।
১৯১৪
সালে, ফিফা অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠিত ফুটবল প্রতিযোগিতাকে "অপেশাদার বিশ্ব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ" হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয় এবং এই প্রতিযোগিতা পরিচালনার
দায়িত্ব নেয়। এর ফলে ১৯২০
সালের গ্রীষ্ম অলিম্পিকে বিশ্বের প্রথম আন্তমহাদেশীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় মিশর (প্রথম খেলায় নকড আউট হয়) ও তেরটি ইউরোপীয়ান
দল।
এতে
বেলজিয়াম স্বর্ণপদক জিতে নেয়। উরুগুয়ে ১৯২৪ ও ১৯২৮ সালের
অলিম্পিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ লাভ করে। ১৯২৮ সালে ফিফা অলিম্পিকের বাইরে আলাদাভাবে নিজস্ব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৩০ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পা দেয়া দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে (১৯২৪ সাল থেকে ফিফার পেশাদার যুগ শুরু করে) ফিফা তাদের ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ হিসেবে নির্বাচন করে।
প্রথম
বিশ্বকাপ :-
১৯৩২
সালের লস এঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত
গ্রীষ্ম অলিম্পিকে ফুটবলকে না রাখার পরিকল্পনা
করা হয় কারণ যুক্তরাষ্ট্রে তখন ফুটবল (সকার) জনপ্রিয় ছিল না। ফুটবলের পরিবর্তে ওখানে আমেরিকান ফুটবল (রাগবি ফুটবল) জনপ্রিয় ছিল। ফিফা এবং আইওসি’র মাঝে অপেশাদার
খেলার মর্যাদা নিয়ে মতবিরোধও দেখা দেয়। ফলে ফুটবল অলিম্পিক থেকে বাদ পড়ে যায়। একারনে ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে প্রথম বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। নির্বাচিত বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুটবল সংস্থাকে এতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়। কিন্তু উরুগুয়েতে বিশ্বকাপ আয়োজনের অর্থ ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলোকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল সফরে
আসতে হবে। এজন্য কোন ইউরোপীয় দেশ প্রতিযোগিতা শুরুর দুইমাস আগেও দল পাঠাতে সম্মত
হয়নি। রিমে
শেষ পর্যন্ত বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া, ও যুগোস্লাভিয়া থেকে
দল আনাতে সক্ষম হন। মোট ১৩টি দেশ এতে অংশ নেয়। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সাতটি, ইউরোপ থেকে দু’টি ও
উত্তর আমেরিকা থেকে দু’টি।
প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচ একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় যাতে অংশ নেয় ফ্রান্স ও মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বেলজিয়াম। ফ্রান্স ৪-১ এবং যুক্তরাষ্ট্র ৩-০ ব্যবধানে এতে জয়ী হয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম গোল করেন ফ্রান্সের লুসিয়েন লরেন্ত। ফাইনালে ৯৩,০০০ দর্শকের সামনে উরুগুয়ে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব লাভ করে।[১১]
বিশ্বকাপের
বিস্তৃতি:-
প্রথম
দিকের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা আয়োজনের মূল সমস্যা ছিল আন্তমহাদেশীয় যাতায়াত ও যুদ্ধঘটিত সমস্যা।
কয়েকটি দক্ষিণ আমেরিকান দল ১৯৩৪ ও
১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার জন্য ইউরোপে যেতে আগ্রহী থাকলেও কেবল ব্রাজিলই এই দুটি প্রতিযোগিতায়
অংশ নিতে পেরেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে
বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিতই হয়নি।
১৯৫০
সালের বিশ্বকাপে প্রথম কোন ব্রিটিশ দল অংশ নেয়।
এই ব্রিটিশ দলগুলো ১৯২০ সাল থেকে ফিফাকে বয়কট করে আসছিল। এর একটি কারণ
ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের সাথে যেসব দেশের যুদ্ধ হয়েছিল তাদের সাথে না খেলার মানসিকতা
এবং অন্য কারনটি ছিল ফুটবলে বিদেশী কর্তৃত্বের বিপক্ষে প্রতিবাদ। তবে তারা ১৯৪৬ সালে ফিফার আমন্ত্রণে সাড়া দেয়। এই বিশ্বকাপে ১৯৩০
সালের বিশ্বকাপজয়ী উরুগুয়েকে আবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে দেখা যায়, যারা পূর্ববর্তী দুটি বিশ্বকাপ বয়কট করেছিল। ১৯৫০ সালে উরুগুয়ে আবার বিশ্বকাপ জিতে নেয়।
১৯৩৪
থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ১৬টি দল মূল পর্বে
অংশ নিত। তবে ১৯৩৮ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়াকে দখল করায় প্রতিযোগিতায় ১৫টি দল অংশ নেয়।
১৯৫০ সালে ভারত, স্কটল্যান্ড ও তুরস্ক নাম
প্রত্যাহার করায় এই বিশ্বকাপে ১৩টি
দল অংশগ্রহণ করে। অধিকাংশ দলই ছিল ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা
থেকে আগত, অল্প কিছু দল খেলেছে উত্তর
আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও ওশেনিয়া থেকে।
এসব দল খুব সজেই
ইউরোপীয় ও দক্ষিণ আমেরিকান
দলগুলোর কাছে হেরে যেত। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা
বাদে কেবল যে দলটি প্রথম
পর্বের বাধা অতিক্রম করতে পেরেছে তারা হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৩০ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল; কিউবা, ১৯৩৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল; উত্তর কোরিয়া, ১৯৬৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল; এবং মেক্সিকো, ১৯৭০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল।
১৯৮২
বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২৪ করা হয়।[১৫] এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে দলের সংখ্যা ৩২-এ উন্নীত
করা হয়। এতে করে আফ্রিকা, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা
থেকে আরো বেশি দল অংশগ্রহণের সুযোগ
পায়। এক্ষেত্রে ওশেনিয়া মহাদেশ ব্যতিক্রম কেননা এখান থেকে কোন দল বিশ্বকাপে সুযোগ
পায়নি। সাম্পতিক বছরগুলোতে এসব এলাকার দলগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি সফলতা পেয়েছে। এসব এলাকার বিশ্বকাপের নক-আউট পর্যায়ে
উত্তীর্ণ দলগুলো হলঃ মেক্সিকো, ১৯৮৬ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৬ সালে
নকআউট পর্যায়; মরক্কো, ১৯৮৬ সালে নকআউট পর্যায়; ক্যামেরুন, ১৯৯০ সালের কোয়ার্টার-ফাইনালিস্ট; কোস্টারিকা, ১৯৯০ সালে নকআউট পর্যায়; নাইজেরিয়া, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ সালে
নকআউট পর্যায়; সৌদি আরব, ১৯৯৪ সালে নকআউট পর্যায়; যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৯৪ সালে নকআউট ও ২০০২ সালে
কোয়ার্টার-ফাইনাল; দক্ষিণ কোরিয়া, ২০০২ সালে চতুর্থ স্থান; সেনেগাল, ২০০২ সালে কোয়ার্টার-ফাইনাল; জাপান, ২০০২ সালে নকআউট পর্যায়; এবং অস্ট্রেলিয়া ও ঘানা, উভয়ে
২০০৬ সালে নকআউট পর্যায়। তবে, ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার
দলগুলো এখনও অন্যান্য দলের ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। এর জ্বলন্ত উদাহরন
হচ্ছে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের আটটি দলই ছিল ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার।
২০০৬
ফিফা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার জন্য ১৯৮টি দল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে এবং
২০১০ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য রেকর্ড ২০৪টি দল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে।
ট্রফি :-
১৯৩০
থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিজয়ী দলকে জুলে রিমে ট্রফি প্রদান করা হত। জনসাধারণের কাছে এটি শুধু বিশ্বকাপ বা Coupe du Monde নামেই বেশি পরিচিত ছিল, তবে ১৯৪৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনকারী ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমের নামে এটির নামকরণ করা হয়। ১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয় বারের মত বিশ্বকাপ জিতলে
তাদেরকে স্থায়ীভাবে ট্রফিটি দেয়া হয়। ১৯৮৩ সালে ট্রফিটি চুরি হয়ে যায় এবং পরে আর উদ্ধার করা
সম্ভব হয়নি। প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় চোর ট্রফিটিকে গলিয়ে ফেলেছে।
১৯৭০
সালের পর আরেকটি নতুন
ট্রফির যা ফিফা বিশ্বকাপ
ট্রফি নামে পরিচিত, নকশা প্রণয়ন করা হয়। সাতটি মহাদেশ থেকে আগত বিশেষজ্ঞগণ ফিফাকে ৫৩টি মডেল প্রদর্শন করেন। শেষপর্যন্ত ইতালিয় নকশাকার সিলভিও গাজ্জানিগার তৈরীকৃত নমুনা বিশ্বকাপ ট্রফি হিসেবে গৃহীত হয়। এ নতুন ট্রফিটির
উচ্চতা ৩৬ সেন্টিমিটার, ১৮-ক্যারট সোনা দিয়ে তৈরি ও ওজন ৬,১৭৫ গ্রাম। এর ভিত্তি দু’স্তরের মূল্যবান ম্যালাকাইট দিয়ে তৈরী। ভিত্তির নিচের দিকে ১৯৭৪ থেকে আজ পর্যন্ত সকল
বিশ্বকাপজয়ীর নাম গ্রথিত করা আছে। গাজ্জানিগা এ ট্রফির বর্ণনা
দিতে গিয়ে বলেছেন: "The lines
spring out from the base, rising in spirals, stretching out to receive the
world. From the remarkable dynamic tensions of the compact body of the
sculpture rise the figures of two athletes at the stirring moment of
victory."
এই
নতুন ট্রফি বিজয়ী দেশকে স্থায়ীভাবে আর দেয়া হয়
না, তা তারা যতবারই
জিতুক না কেন। বিশ্বকাপ
জয়ী দল পরবর্তী বিশ্বকাপ
পর্যন্ত ট্রফিটি তাদের কাছে রাখতে পারে। এরপর তাদেরকে সোনার প্রলেপ দেয়া নকল বিশ্বকাপ ট্রফি দেয়া হয়। আর্জেন্টিনা, জার্মানি (পশ্চিম জার্মানি হিসেবে), ইতালি , ব্রাজিল ও ফ্রান্স প্রত্যেকে
দুইবার করে ট্রফিটি জিতেছে। ২০৩৮ সালে এটির ভিত্তিতে বিজয়ী দলের নাম লেখার মত আর জায়গা
থাকবে না। তখন এ ট্রফিটি হয়তো
বাদ দেয়া হবে।
খেলার
যোগ্যতা :-
১৯৩৪
সালের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে থেকে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা সীমিত রাখতে যোগ্যতা নিরূপণী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ছয়টি মহাদেশীয় এলাকার (আফ্রিকা, এশিয়া, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা
এবং ক্যারিবিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকা, ওশেনিয়া, ইউরোপ) কনফেডারেশন এটির ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত। প্রতিটি বিশ্বকাপে ফিফা ঠিক করে কোন মহাদেশ থেকে কতটি দল অংশ নেবে।
সাধারণত কনফেডারেশনভুক্ত দলের শক্তি ও দক্ষতার উপর
নির্ভর করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া
হয়। তবে এখানে কনফেডারেশন সমূহের লবিং ও কাজ করে
সাধারণত
চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার তিন বছর আগেই যোগ্যতা নিরূপনী প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। এটি প্রায় দু’বছর ধরে
চলে। বিভিন্ন কনফেডারেশনভেদে প্রতিযোগিতার রকম বিভিন্ন হতে পারে। সাধারণত একটি বা দুটি স্থান
আন্তমহাদেশীয় দলের মধ্যে প্লে অফের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরুপ: ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলের বিজয়ী ও দক্ষিণ আমেরিকার
পঞ্চম স্থানের দল দুটি বিশ্বকাপে
সুযোগ পাওয়ার জন্য প্লে অফ খেলেছিল। ১৯৩৮
বিশ্বকাপ থেকে স্বাগতিকরা চূড়ান্ত পর্বে সরাসরি অংশ নিচ্ছে। আগে বিগত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলটির পরবর্তী বিশ্বকাপে অংশ নিতে বাছাই পর্ব খেলতে হত না। কিন্তু
২০০৬ সাল থেকে বিগত চ্যাম্পিয়ন দলটিকেও বাছাই পর্ব টপকে চূড়ান্ত পর্বে খেলতে হচ্ছে।
সংগঠন
এবং গণমাধ্যম :-
১৯৫৪
সালে বিশ্বকাপ প্রথম টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। বর্তমানে এটি টেলিভিশনে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। এমনকি অলিম্পিক গেমসের চেয়েও বেশি মানুষ বিশ্বকাপ দেখে থাকে। ২০০২ বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচের সর্বমোট দর্শকসংখ্যা ছিল প্রায় ২৮.৮ বিলিয়ন।
১.১ বিলিয়ন মানুষ
সরাসরি এ বিশ্বকাপের ফাইনাল
দেখেছেন যা পৃথিবীর মোট
জনসংখ্যার ছয় ভাগের এক ভাগ। ২০০৬
বিশ্বকাপের ড্র, যা বিশ্বকাপে বিভিন্ন
দলের গ্রুপ নির্ধারন করে, তা দেখেছেন প্রায়
৩০০ মিলিয়ন দর্শক।
১৯৬৬
সাল থেকে প্রতি বিশ্বকাপের একটি নিজস্ব মাস্কট বা প্রতীক আছে।
বিশ্বকাপ উইলি প্রথম বিশ্বকাপ মাস্কট, যা ১৯৬৬ সালের
বিশ্বকাপে ব্যবহৃত হয়েছে। ২০০৬ বিশ্বকাপের মাস্কট হচ্ছে গোলিও, একটি সিংহ, এবং পিলি, একটি ফুটবল।