বদলী বা Transfer এর ধারণা ও তার কারন কি

 


বাংলা সপ্তাহে ৭ দিনের নামকরণ কিভাবে হল ?

বাংলা দিনের নামকরণ কিভাবে হয়েছিল ?

বাংলা দিনপন্জিকা অন্যান্য দিনপন্জিকার মতোই সাত দিনকে গ্রহণ করেছে এবং দিনের নামগুলো অন্যান্য দিনপন্জিকার মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।

 


. সোমবার হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে।

.  মঙ্গলবার হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে।

.  বুধবার হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসা।

.  বৃহস্পতিবার হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে।

. শুক্রবার হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে।

. শনিবার হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে।

.  রবিবার হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে।

 

বাংলা সনে দিনের শুরু শেষ হয় সূর্যোদয়ে

 

ভারতবর্ষে সপ্তাহ

ভারতবর্ষেও প্রাচীন হিন্দু জ্যোতিষীরা দেবতাদের নামে গ্রহের নাম আর গ্রহের নাম অনুসারে সপ্তাহের প্রতিটি দিনের নাম রেখেছেন। ধারণা করা হয়, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্ত শাসনামলে এই নামকরণ করা হয়। সংস্কৃত ভাষায় বারের নামগুলো হলো,

 

শনি> আদিত্য (সূর্য বা রবি) > সোম (চাঁদ)> মঙ্গল> বুধ> বৃহস্পতি> শুক্র

 

শনি: হিন্দু পুরাণ মোতাবেক শনি এক উগ্র দেবতা। তার কুদৃষ্টি খারাপ ফল বয়ে নিয়ে আসে। সে মূলত সূর্য তার স্ত্রী ছায়ার সন্তান।

রবি: রবি মানে সূর্য, সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় আদিত্য। রবিবারকে সংস্কৃত ভাষায় বলে আদিত্যবার। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, সূর্যনারায়ণ বা সূর্যদেবতার নামের ভিত্তিতেই এই সূর্য বা রবির নামকরণ করা হয়েছে। সূর্যের মা হচ্ছেন অদিতি আর বাবা কশ্যপ।

সোম: সোম মানে চাঁদ। হিন্দু মিথ অনুযায়ী, দেবতা শিবের সাথে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। 

মঙ্গল: হিন্দু মিথ অনুযায়ী, মঙ্গল হলেন যুদ্ধের দেবতা। ইনি শিবের রক্তবিন্দু থেকে জন্ম নিয়েছেন বলে কোনো কোনো উৎস থেকে জানা যায়।

বুধ: বুধ হলো এক ঐশ্বরিক সত্ত্বা। সে বৃহস্পতি তার স্ত্রী তারার সন্তান। অবশ্য কখনো কখনো বুধকে চাঁদের (সোম) এর সন্তান বলেও সূত্রগুলো বলে থাকে।

বৃহস্পতি: বৃহস্পতি হলো সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। হিন্দু ধর্মমতে, একে 'গুরু' বলা হয়। ইনি যার পক্ষে থাকেন, তার ভাগ্য প্রসন্ন হয়।

শুক্র: শুক্র হল অসুর দেবতাকূলের প্রধান, হিন্দু মিথ অনুযায়ী তার পুরো নাম শুক্রাচার্য।

আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, গ্রিকরা যে যে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেবতাদের নাম অনুযায় গ্রহ/বারের নাম রেখেছিলেন, ভারতবর্ষেও ঠিক সেসব বিষয় সংশ্লিষ্ট দেবতাদের নামেই গ্রহ/বারের নাম রেখেছেন। এই আশ্চর্য মিলের একটি কারণ হতে পারে- হিন্দু জ্যোতিষীগণ গ্রিক জ্যোতিষশাস্ত্র সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। কেননা, গ্রিকদের দর্শন বিশ্বাস এই সমাজে খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকেই দেখা যায়।

ইংরেজিতে সপ্তাহের বারের নামগুলো কীভাবে এলো?

সাত দিনের নামগুলো কী সে তো আমরা সবাই জানি-Sunday, Monday, Tuesday, Wednesday, Thursday, Friday এবং Saturday কিন্তু নামগুলো এভাবে কেন রাখা হলো।

 

এই নামগুলোর উৎপত্তি ঠিক কোন ভাষা হতে, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন মত দেখা যায়। তবে, প্রধান মতটি হচ্ছে, ইংরেজি এই বারগুলোর নাম এসেছে স্যাক্সনদের কাছ থেকে। স্যাক্সন হলো একটি জার্মানীয় জাতি, যারা প্রাচীন জার্মানির উত্তরাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলে বসবাস করতো। পরে এরা ইংল্যান্ডের একটি বড় অংশ অধিকার করে নেয়। এই জাতির ভাষা সংস্কৃতি থেকেই প্রাচীন আমলের ইংরেজি ভাষা সাহিত্যের উদ্ভব।

 

এই স্যাক্সন জাতিগোষ্ঠী বিভিন্ন দেব-দেবীর নামে সপ্তাহের সাতটি বারের নাম রাখে। ইংরেজি ভাষার পুরোটাই প্রায় গড়ে উঠেছে এই স্যাক্সন জাতির ভাষা থেকে। ইংরেজি সাতটি দিনের নামও সেখান থেকেই উদ্ভূত হয়েছে। তবে, শনিবারের যে ইংরেজি রূপ মানে Saturday, সেটি স্যাক্সন ভাষায় এই রূপটি পাওয়া যায়নি।

 

এবার জেনে নেয়া যাক স্যাক্সনরা এই নামগুলো কীভাবে রাখলো বা কোত্থেকে পেলো। স্যাক্সনরা হলো আদিতে জার্মানিক জাতিগোষ্ঠী। এই স্যাক্সন বা জার্মানিক জাতিগোষ্ঠী মূলত রোমনদের স্থলাভিষিক্ত, বা বলা যায় তাদের উত্তরকালের জাতি। এরা রোমনদের কাছ থেকে সপ্তাহের সাত বারের নাম জেনেছে এবং প্রত্যেকটি বারের নামের ক্ষেত্রে রোমান দেবতার নামের জায়গায় নিজ নিজ অনুরূপ দেবতার নাম বসিয়েছে। রোমন ভাষাতে সপ্তাহের সাতটি দিনের নাম রোমান দেবতাদের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে এবং এই দেবতাগুলো স্যাক্সন ভাষার দেবতাদের অনুরূপ। ফলে সাতটি বারের নামের মধ্যে এক অদ্ভুত সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। ইংরেজি ‘Saturday’ নামটির উৎসমূল স্যাক্সন ভাষায় পাওয়া যায়নি, সেটি আসলে রোমান ভাষা থেকেই নেওয়া হয়েছে।

 

এবার আরেকটু পিছিয়ে যাই। রোমানরা কেন ধরনের নাম রাখলো, সেই সূত্র খুঁজতে গেলে এবার গ্রিসে যেতে হবে। গ্রিকরা মূলত বিভিন্ন দেব-দেবীর নাম অনুসারে সপ্তাহের সাতটি দিনের নাম রেখেছে। আর এই গ্রিক পুরাণের এই দেব-দেবীরা যে যে বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেসব বিষয়ে রোমানরা আবার যেসব দেবতায় বিশ্বাসী, সেই সব দেবতার নাম প্রতিস্থাপন করে নিজেদের সাতটি দিনের নামকরণ করেছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, গ্রিক জাতির লোকেরা বিভিন্ন ঐশ্বরিক সত্ত্বার নামে সাত টি বারের নাম রেখেছিলো।

 

সেই গ্রিক ঐশ্বরিক সত্ত্বারা কিন্তু আবার পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান বিভিন্ন জ্যোতিষ্ক দ্বারা সংকেতায়িত। যেমন গ্রিক পুরাণমতে, আফ্রোদিতি হচ্ছেন সৌন্দর্যের দেবী। আর আকাশে খালি চোখে যেসব গ্রহ দেখা যায়, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে শুক্র গ্রহ। তাই, গ্রিক ভাষায় শুক্র গ্রহের নাম রাখা হয়েছেআফ্রোদিতি

 

সপ্তাহে দিনগুলোর নামের বর্ণনা:-

১। Sunday:  সূর্যের দিন। গ্রিক পুরাণমতে, হেলিওস হচ্ছেন এক শক্তিশালী দেবতা। ইনি সূর্যদেব হিসেবেও খ্যাত। গ্রিকহেলিওসশব্দের অর্থ হচ্ছে সূর্য। রোমান ভাষায় Sol বলতে সূর্যরূপী দেবতাকেই বোঝানো হয়, যাকে স্যাক্সন ভাষায় বলা হতো Sunne, আর সেখান থেকেই ইংরেজি Sun.

পৃথিবীর আকাশ থেকে দেখতে পাওয়া জ্যোতিষ্কগুলোর মধ্যে সূর্যই সবচেয়ে উজ্জ্বল। সূর্যই অন্যসব জ্যোতিষ্ক শাসন করে বলে ল্যাটিন ভাষায় রবিবারকে dominica বলে, যা Lord’s Day নামেও পরিচিত।

 

২। Monday: চাঁদের দিন। এটা আসলে Moon’s day থেকে পরিবর্তিত হয়ে এই রূপে এসেছে। গ্রিক পুরাণ মতে, selenes হচ্ছেন চাঁদের দেবী। রোমান ভাষায় এই চাঁদকে বলে Moon. আরেকটি বহুল প্রচলিত নাম হচ্ছে Luna, যিনি কিনা Sol (সূর্য) দেবতার পরিপূরক এক নারী সত্ত্বা।

 

৩। Tuesday: গ্রিক শাস্ত্রমতে, Ares নামে এক দেবতা আছেন, যিনি যুদ্ধ আর ধ্বংসের প্রতীক। এর নামে আকাশে দৃশ্যমান মঙ্গলগ্রহের নাম রাখা হয়েছে Ares. আর এই গ্রহের নাম অনুসরণ করেই আবার গ্রিক ভাষাতে মঙ্গলবারের নাম রাখা হয়েছে রোমান ভাষায় অনুরূপ দেবতা হচ্ছেন Mars তবে, স্যাক্সনদের ধর্মবিশ্বাস মতে, Mars এর অনুরূপ দেবতা মানে যুদ্ধ আর ধ্বংসের দেবতা, তিনি হলেন Tiu, সেখান থেকেই ইংরেজি Tuesday.

 

৪। Wednesday: গ্রিক পুরাণ মোতাবেক দেবতা জিউসের এক সন্তানের নাম হারমিস। এই হারমিস দেবতা বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট। Hermes দেবতার নামানুসারে গ্রিক ভাষায় সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্রহের নাম রাখা হয়েছে Hermes. আর বুধবারের নামও তাই। ওদিকে রোমান মাইথোলজি বলে, ব্যবসা-বাণিজ্যের দেবতা হচ্ছেন Mercury. তবে ইংরেজি ভাষায় কিন্তু দিনটির নাম Mercury Day নয়; বরং Wednesday, যা এসেছে জার্মান প্রভাবিত বিশেষ দেবী Woden এর নাম থেকে। এই ওডেন দেবীর জন্য বরাদ্দকৃত দিনের নাম Woden’s Day বা Wednesday.

 

৫। Thursday: Thursday মানে Thor’s day. অ্যাংলো-স্যাক্সন বিশ্বাস মোতাবেক থর হলেন থান্ডার বা বজ্রপাতের দেবতা। তাই, তার নামে একটি দিনের নাম রাখা হলো Thursday. গ্রিক ভাষায় এইবজ্রপাতের পিতাখ্যাত দেবতাটি হচ্ছেন জিউস। তাই তো গ্রিক ভাষায় সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহটির নাম প্রচলিত গল্পগাথার সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছেজিউস’, আর বারের নামটিওজিউসের বার অবশ্য এই গ্রহকে ইংরেজিতে আমরা কিন্তুথরবাজিউসনামে চিনি না, চিনি রোমানজুপিটারনামে।

 

৭। Saturday: Saturn’s Day বা স্যাটার্নের দিন। স্যাটার্ন হলেন রোমান দেবতা যিনি খুশি হলে ভালো ফসল দেন কৃষকদেরকে। গ্রিক ভাষায় অনুরূপ দেবতা হলেন ক্রোনাস। অ্যাংলো-স্যাক্সন ভাষায় এই নামের কোনো প্রতিশব্দ পাওয়া যায়নি। ইংরেজিতে Saturday নামটি সরাসরি রোমান থেকে আত্তীকরণ করা হয়েছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ভাষায়, দিনকে বোঝাতে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়, তার অর্থস্নানবার সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা সপ্তাহের শনিবারে কেবল স্নান করতো, এজন্যই হয়তো এমন নাম।


ইহুদি বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইউরোপের অনেক ভাষাতেই কিন্তু শনিবারকে ইহুদি প্রত্যয়সাবাথএর সাথে মিলিয়ে অনুরূপ কিছু একটা ডাকা হয়।

গ্রহ/দেবতাদের নাম অনুসারে গ্রিক সাতটি বারের নাম হলেও , সেখানে বারগুলোর নাম সংখ্যা দিয়ে রাখা হয়েছে, অর্থাৎ অনেকটা এরকম, ‘প্রথম দিন’ (রোববার), ‘দ্বিতীয় দিন’ (সোমবার) ইত্যাদি।

 

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও বিজয়

 

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ বিজয়

ডিসেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত হতোদ্যম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারা ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটে; প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালি জাতির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

 


পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি, ভারত বাংলাদেশ বাহিনীর পূর্ব রণাঙ্গনের প্রধান কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সামনে আত্মসমর্পণের নির্দশনপত্রে স্বাক্ষর করছেন, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ I

 

ডিসেম্বর এক বার্তায় গভর্নর মালিক পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতিকে জানান, ‘সামরিক পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। পশ্চিমে শত্রু ফরিদপুরের কাছে চলে এসেছে এবং পূর্বে লাকসাম কুমিল্লায় আমাদের বাহিনীকে পাশ কাটিয়ে মেঘনা নদীর ধারে পৌঁছেছে। বাইরের সাহায্য যদি না আসে, তবে শত্রু যেকোনো দিন ঢাকার উপকণ্ঠে পৌঁছে যাবে। পুনরায় আপনাকে বলছি, আশু যুদ্ধবিরতি রাজনৈতিক সমাধানের কথা বিবেচনা করুন।এরপর ১০ ডিসেম্বর গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী মুখ্য সচিব পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তা মুজাফফর হোসেন ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছেআত্মসমর্পণেরআবেদন হস্তান্তর করেন।

এতে অবশ্য কৌশলে আত্মসমর্পণ শব্দটি বাদ দিয়ে অস্ত্রসংবরণ কথাটি ব্যবহার করা হয়। এই আবেদনে আরো লেখা ছিল, ‘যেহেতু সংকটের উদ্ভব হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, তাই রাজনৈতিক সমাধান দ্বারা এর নিরসন হতে হবে। আমি তাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির দ্বারা অধিকারপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ঢাকায় সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানাই। আমি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাই।

এই আবেদন ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধি পল মার্ক হেনরির হাতে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি মহলে বার্তাটি মালিক-ফরমান আলী বার্তা হিসেবে পরিচিতি পায়। পরদিন তা আবার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

 

মুক্তিযোদ্ধা ভারতীয় সৈন্যরা ঢাকা ঘেরাও করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্যে আহবান করে। মিত্রবাহিনী কর্তৃক গভর্নর হাউজে (বর্তমান বঙ্গভবন) বোমাবর্ষণের কারণে গভর্নর মালিকের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের পুতুল সরকারও ইতোমধ্যে পদত্যাগ করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমান হোটেল শেরাটন) আশ্রয় নেয়। সময় থাকতে শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়ে আকাশ থেকে অনবরত প্রচারপত্র ফেলা হতে থাকে।

 

অবশেষে নিয়াজির অনুরোধে ১৫ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ভারতীয় বিমান আক্রমণ স্থগিত রাখা হয়। পরদিন সকালে বিমান আক্রমণবিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার কিছু আগে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী জাতিসংঘের প্রতিনিধি জন কেলির মাধ্যমে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষকে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময়সীমা আরও ছয় ঘণ্টার জন্য বাড়িয়ে দিয়ে ভারতের একজন স্টাফ অফিসার পাঠানোর অনুরোধ জানান যাতে অস্ত্রসমর্পণের ব্যবস্থাদি স্থির করা সম্ভব হয়। এই বার্তা পাঠানোর কিছু আগে অবশ্য ভারতীয় মেজর জেনারেল নাগরার বাহিনী কাদের সিদ্দিকীর মিলিশিয়া বাহিনীকে সঙ্গে করে মিরপুর সেতুতে হাজির হন এবং সেখান থেকে নাগরা নিয়াজিকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান।

 

নিয়াজির আত্মসমর্পণের ইচ্ছা ব্যক্ত হওয়ার পর সকাল ১০:৪০ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে নাগরার বাহিনী ঢাকা শহরে প্রবেশ করে। পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দলিল এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাদি চূড়ান্ত করার জন্য ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জ্যাকব মধ্যাহ্নে ঢাকায় এসে পৌঁছান।

বিকেল চারটার আগেই বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীর দুটি ইউনিটসহ মোট চার ব্যাটালিয়ন সৈন্য ঢাকায় প্রবেশ করে। সঙ্গে কয়েক সহস্র মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকার জনবিরল পথঘাট ক্রমে জনাকীর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করেজয় বাংলামুখরিত মানুষের ভিড়ে। বিকেল চারটায় ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম-কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, বাংলাদেশের ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল করিম খোন্দকার এবং ভারতের অপরাপর সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিনিধিগণ ঢাকায় অবতরণ করেন। কিছুক্ষণ পরেই ইন্দিরা গান্ধী পূর্ব পশ্চিম উভয় রণাঙ্গনে ভারতের পক্ষ থেকে এককভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন।

 

১৬ ডিসেম্বর বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি হাজার হাজার উৎফুল্ল জনতার সামনে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। প্রায় ৯৩,০০০ পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের মানুষের বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয় ধরা দেয় যুদ্ধ শুরুর নয় মাস পর। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করলেও সারা দেশে সকল পাকিস্তানি সৈন্যকে আত্মসমর্পণ করাতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণতম প্রান্তে প্রবেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত।