করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সেরে উঠলে আপনার কি এই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হবে?

এধরনের ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হলে সেটা প্রতিরোধ করার জন্য মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই অ্যান্টিবডি ভবিষ্যতে একইধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে তোলে।


বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত দুইভাবে কাজ করে। প্রথম ব্যবস্থাটা আমাদের শরীরে সব সময়ই কার্যকরী থাকে। বাইরে থেকে কোনো রোগ-জীবাণু শরীরে ঢুকলেই শরীর তা টের পায় এবং সেই রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। একে বলা হয়, শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক প্রতিক্রিয়া। শরীরের এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না।



করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেহকোষকে লক্ষ্য করে লড়াই চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শরীরে প্রায় ১০ দিন সময় লাগে। এই দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অ্যান্টিবডিগুলো যদি যথেষ্ট শক্তিশালী হয়, তাহলে শরীর একই ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের কথা মনে রাখতে পারে এবং ভবিষ্যতে চেনা শত্রু হিসেবে এর মোকাবিলা করতে পারে। অর্থাৎ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে ওঠার পর শরীরে থাকা অ্যান্টিবডি যদি যথেষ্ট শক্তিশালী না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।

 

আবার কারো যদি সামান্য উপসর্গ দেখা দেয়, বা কোনো উপসর্গই না হয়, তাহলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেই ভাইরাসের কথা মনেই রাখে না। অর্থাৎ তার শরীরে ওই ভাইরাস মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিরোধ যথেষ্ট মাত্রায় তৈরি হয় না। কিছু কিছু সংক্রমণের কথা অ্যান্টিবডির স্পষ্ট মনে থাকে, কিন্তু কিছু সংক্রমণের কথা বেমালুম ভুলে যায়। শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি এবং স্মৃতিশক্তি যদি যথেষ্ট শক্তিশালী না হয়, তাহলেও দ্বিতীয়বার এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

 

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানবদেহে ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য কোনো মানুষকে দুই বার সংক্রমিত করা হয়নি। বিশেষ ধরনের এক জোড়া বানরের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরীক্ষা চালানোর জন্য এই বানরদের দুই বার সংক্রমিত করা হয়েছে। একবার করা হয়েছে যাতে তারা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে এবং তিন সপ্তাহ পর দ্বিতীয়বার করা হয়েছে। খুবই সীমিত পরিসরের এই পরীক্ষায় দেখা গেছে খুবই অল্প দিনের মধ্যে তাদের ভেতর দ্বিতীয়বার কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।

তার পরও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ আশাবাদী হতে পারছেন না যে, আবারও তারা করোনায় আক্রান্ত হবেন না। পরীক্ষায় তাদের প্রায় প্রত্যেকের শরীরে কিছু না কিছু পরিমাণ অ্যান্টিবডি পাওয়া যাবে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে সেটা প্রয়োজনীয় মাত্রার নাও হতে পারে। বিশেষ একধরনের অ্যান্টিবডিই শুধু করোনা ভাইরাস জীবাণুর গায়ে সেঁটে বসতে পারে এবং ভালো কোষগুলোকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

চীনে সেরে ওঠা ১৭৫ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এদের শতকরা ৩০ ভাগের মধ্যে এই বিশেষ অ্যান্টিবডির মাত্রা খুবই কম। আরেকটি বিষয় হলো, সঠিক অ্যান্টিবডি হয়তো আপনার মধ্যে ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি করবে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনার শরীর থেকে এই জীবাণু উধাও হয়ে যাবে। এই জীবাণু আপনার শরীরে বাসা বেঁধে থাকলে অন্যকে সংক্রমিত করার ঝুঁকিও থেকে যায়।

ব্রিটেনের ব্রাইটন সাসেক্স মেডিক্যাল স্কুলের সংক্রামক রোগের ইমেরিটাস অধ্যাপক জন কোহেন বলেন, অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, একবার কেউ সংক্রামিত হলে, শরীরে প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়। তাই তাঁদের আর সংক্রমণ ঘটে না। তবে সব ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ বিষয়ক কেন্দ্র সিডিসি- গবেষকরা জানান, করোনাভাইরাসের পক্ষে মানবদেহে দ্বিতীয়বার হানা দেওয়া অসম্ভব। তাঁর জানান, নিষ্ক্রিয় ভাইরাস জীবন্ত ভাইরাসের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারেনি ওই টেস্টগুলো। তাই জেরেই এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল।

 

সিডিসি জানিয়েছে, এইচআইভি চিকেনপক্সের মতো ভাইরাসগুলো মানব কোষের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করতে পারে। পুনরায় সক্রিয় হওয়ার আগে, এই ভাইরাসগুলো বছরে পর বছর সুপ্ত থাকতে পারে। কিন্তু করোনাভাইরাস হোস্ট সেলের নিউক্লিয়াসের বাইরে থাকে। এর মানে, এই ভাইরাসটি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ বা পুনরাবৃত্তি ঘটায় না।

নোবেল পুরস্কার কি এবং কে,কখন,কোথায় শুরু করেন ?

সুইডেনের রসায়নবিদ ও শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুসারে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।নোবেল পাঁচটি ক্ষেত্রে পুরস্কার দেয়ার জন্য তার মোট সম্পত্তির শতকরা ৯৪ ভাগ(৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা) দান করে যান  ।।



১৯০১ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার (সুয়েডীয়: Nobelpriset নোবেল্‌প্রীসেৎ) প্রবর্তিত হয়। ঐ বৎসর থেকে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সফল এবং অনন্য সাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণমূলক তুলনারহিত কর্মকাণ্ডের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। মোট ছয়টি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হল: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তি নোবেল পুরস্কারকে এ সকল ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদেরকে ইংরেজিতে নোবেল লরিয়েট বলা হয়।
সুয়েডীয় বিজ্ঞানী আলফ্রেদ নোবেলের ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইল-এর মর্মানুসারে নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়। নোবেল মৃত্যুর পূর্বে উইলের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা করে যান। শুধুমাত্র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় অসলো, নরওয়ে থেকে। বাকি ক্ষেত্রে স্টকহোম, সুইডেনে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অর্থনীতি ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে ১৯০১ সাল থেকে পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে, কিন্তু অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান শুরু হয়েছে ১৯৬৯ সালে। আলফ্রেদ নোবেল তার উইলে অর্থনীতির কথা উল্লেখ করেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত পুরস্কার প্রদান বন্ধ ছিল। প্রত্যেক বছর পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেক একটি স্বর্ণপদক, একটি সনদ ও নোবেল ফাউন্ডেশন কর্তৃক কিছু পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৮০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনা। নোবেল পুরস্কার মৃত কাউকে দেয়া হয় না। লরিয়েটকে অবশ্যই পুরস্কার প্রদানের সময় জীবিত থাকতে হবে।কিন্তু এর কিছু ব্যতিক্রম আছে। খুব বেশি অবদান এর জন্য মরনত্তোর পুরস্কার দেয়া হয়।

প্রতি শতকেইএসেছে মহামারি

গত ৮ শতাব্দীর প্রতিটিতেই প্রাই একই সময়ে এসেছে নতুন নতুন মহামারি। জীবন গেছে কোটি কোটি মানুষের।  আর আর্শ্চয়ের বিষয় হল গত ৪ শতকের প্রতি ২০ সালেই আঘাত হেনেছে এই মহামারির দৈত্য। 





১৭২০ সালের প্লেগ: ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু

১৮২০ সালের কলেরা: লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি

১৯২০ সালের স্প্যানিস ফ্লু: মারা যায় ৫ কোটি মানুষ

২০২০ সালের করোনাভাইরাস : মৃত্যুর হার চলমান



১৭২০ সালের প্লেগ: জীবন হরণ করা এ মৃত্যুর নাম ‘দ্য ব্ল্যাক ডেথ’ বা কালো মৃত্যু। রোগের নাম প্লেগ। পৃথিবীর ইতিহাস একক কারণে এত মৃত্যু দেখেনি—ইউরোপ হারিয়েছে তার তখনকার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধাংশ। ১৭২০ সাল থেকে পরবর্তী ২ বছরে গ্রেট প্লেগ অব মার্সেইতে ১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ফ্রান্সে শুধু মার্সেই শহরে মারা যান ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। ফ্রান্সের জন্মহার প্রায় ৪৫ বছরের জন্য কমে গিয়েছিল এই প্লেগের প্রভাবে।


মধ্যযুগীয় ইতিহাস গবেষক ফিলিপ ডেইলিভার তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, চার বছর মেয়াদি প্লেগ মড়কে ইউরোপের ৪৫-৫০ ভাগ জনসংখ্যা বিলীন হয়ে যায়, যা প্রায় ২০ কোটি। তবে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় এ হিসাবের তারতম্য দেখা যায়। যেমন ইতালি, দক্ষিণ ফ্রান্স ও স্পেনে ৭৫-৮০ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়; কিন্তু জার্মানি ও ইংল্যান্ডে জনসংখ্যার ২০ ভাগ প্লেগের বলি হয়।

১৮২০ সালের কলেরা: ১৮০০ সাল থেকে সারাবিশ্বে কলেরা মহামারি শুরু হয়েছে। এটি অতি মহামারি আকার ধারণ করে ১৮১৭ সালে। ১৮২৪ সাল পর্যন্ত এর প্রভাব থাকলেও ১৮২০ সালে তা সর্বোচ্চ আকার ধারণ করে। এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ কলেরায় প্রাণ হারিয়েছেন। তবে ১৮২০ সালে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কলেরায় আক্রান্ত এলাকার দৃশ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন। ২০ সালে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কলেরায় আক্রান্ত এলাকার দৃশ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন। এশিয়াটিক কলেরা নামে পরিচিত এই অতি মহামারি শুরু হয় কলকাতার ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে। পরে তা প্রায় অর্ধেক বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। 
এতটাই মহামারি ছিল যে- চীন, রাশিয়া ও ভারতে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ শতকে কলেরা সবচেয়ে বড় আঘাত হানে। এতে দুই দশকে দেশটির প্রায় ৮ লাখ মানুষ প্রাণ হারান।

১৯২০ সালের স্প্যানিস ফ্লু: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত না শুকাতেই পৃথিবীজুড়ে শুরু হয়েছিল নতুন আরেক যুদ্ধ। সারা পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইল এক মরণব্যাধি, নাম ‘স্প্যানিস ফ্লু’। ‘স্প্যানিস ফ্লু’ নামের সেই মহামারীতে পরের দুই বছরে সারা পৃথিবীতে মানুষ মারা গেলেন চারকোটির বেশি।  স্প্যানিশ ফ্লু নামে নতুন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ কানসাসের আমেরিকান সেনা সদস্যদের মধ্যে। পরে ঝড়ের গতিতে ছড়াতে শুরু করলো সেই জ্বর। সারা পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইল এই মরণব্যাধি। পরের দুই বছরে সারা পৃথিবীতে প্রাণহানি হয় কমপক্ষে ৫ কোটি মানুষের। 
উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে আক্রমণ হলেও সারা পৃথিবীর কোনো দেশই মুক্তি পায়নি এ জ্বরের ছোবল থেকে। স্প্যানিস ফ্লু দ্বিতীয় দফা আসে ১৯১৯ সালের বসন্তে। কোনো কোনো জায়গায় তৃতীয়বারের ধাক্কাও এসেছিল, আর সেটার সময় ছিল ১৯২০ সালে।

২০২০ সালের করোনাভাইরাস : কোভিড-১৯ রোগটি প্রতি শতকের ২০ সালে মহামারির সঙ্গে মিল থাকার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নির্দিষ্ট ভাইরাস মৌসুমী হলেও এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই যে প্রতি শতাব্দীতে একবার ভাইরাল মহামারি ঘটে।
এ প্রসঙ্গে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত ডা. সুসান মারকাদো বলেছেন, ‘কোনো মিল নেই। তবে আপনি যদি কিছু ভাইরাস সত্যিই মৌসুমী কিনা তা জিজ্ঞাসা করছেন,তবে হ্যা মিল আছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘কিছু রোগের মহামারি বারবার ঘটে। তবে কোভিড-১৯ মহামারি একটি অজ্ঞাত এবং সম্পূর্ণ নতুন রোগ।’


তথ্যসুত্র: প্রাইম নিউজ বিডি, ডেইলি বাংলাদেশ ও অনান্য ইন্টারনেট সাইট।

দ্বারকা: সমুদ্রের গভীরে হারিয়ে যাওয়া শ্রীকৃষ্ণের প্রাচীন

দ্বারকা: সমুদ্রের গভীরে হারিয়ে যাওয়া শ্রীকৃষ্ণের প্রাচীন নগরী


আরব সাগরের তীরে এবং উপকূল উভয় দিকেই, ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ কর্তৃক সম্পাদিত হয়েছে। ১৯6363 সালে জমিতে প্রথম তদন্তে অনেক নিদর্শন প্রকাশিত হয়েছিল। জনবসতিগুলি বহির্মুখী এবং অভ্যন্তর প্রাচীর এবং কেল ঘাঁটি আকারে। নোঙ্গরগুলির টাইপোলজিকাল শ্রেণিবিন্যাস থেকে অনুমান করা হয় যে দ্বারকা বন্দর হিসাবে ভারতের মধ্য রাজ্যগুলির সময়কালে উন্নত হয়েছিল। উপকূলীয় ক্ষয় সম্ভবত একটি প্রাচীন বন্দর যা ছিল ধ্বংসের কারণ ছিল।

 বর্তমানের দ্বারকা ভারতের উত্তর-পশ্চিমের রাজ্য গুজরাটের একটি জেলা।এটি গোমতী নদীর ডান তীরে ওখামণ্ডল উপদ্বীপের পশ্চিম তীরে অবস্থিত। দ্বারকা প্রায়শই দ্বারকা কিংডম, কৃষ্ণের প্রাচীন রাজ্য, এবং এটি গুজরাটের প্রথম রাজধানী বলে বিশ্বাস করা হয়।

 দ্বারকা শব্দেরদ্বারঅর্থ দরজা আরকাঅর্থ স্বর্গ কিংবা মোক্ষ। সে অর্থে দ্বারকা মানেস্বর্গের দ্বারকিংবা মোক্ষ লাভের উপায়। এছাড়াও দ্বারকা ভারতের সপ্তপুরী নামে পরিচিত সাতটি বিখ্যাত প্রাচীন শহরের একটি। এটি এখানে অবস্থিত ৮০০ বছর পুরানো ৫৭ মিটার উঁচু কৃষ্ণ মন্দিরের জন্য বেশ পরিচিত। তবে বর্তমানের এই দ্বারকা শহর মূলত হিন্দু ধর্মের দেবতা শ্রীকৃষ্ণের প্রতিষ্ঠিত সেই প্রাচীন নগরীর জন্যই বেশি প্রসিদ্ধ, যা একসময় ডুবে গিয়েছিল সমুদ্রের নিচে।

 পৌরাণিক নগরী দ্বারকার কথা প্রাচীন ভারত হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান মহাকাব্য মহাভারত সহ ভগবত গীতা, স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণপুরাণ, হরিবংশ ইত্যাদি গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে দ্বারকা হলো সেই প্রাচীন শহর যেখানে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণ একসময় বাস করতেন। বিভিন্ন সূত্রানুসারে শ্রীকৃষ্ণ বর্তমান ভারতের দিল্লীর দক্ষিণে অবস্থিত উত্তর প্রদেশের মথুরায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

  কৃষ্ণের মামা কংস ছিলেন তৎকালীন মথুরার অত্যাচারী রাজা। পরবর্তীতে কৃষ্ণ কংসকে হত্যা করেন। ফলে খবর শুনে কংসের শ্বশুর, মগধের রাজা জরাসন্ধ রেগে যান এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মথুরা আক্রমণ করেন। কিন্তু ১৭ বার মথুরা আক্রমণের পরও জরাসন্ধ মথুরা জয় করতে ব্যর্থ হন। তবে এই ১৭ বার আক্রমণে মথুরার অধিবাসী যাদবরা দুর্বল হয়ে পড়ে। কৃষ্ণ যখন বুঝতে পারেন জরাসন্ধ আর একবার আক্রমণ করলে তারা আর তা প্রতিরোধ করতে পারবেন না, তখন তিনি তার লোকদের নিয়ে মথুরা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

মথুরা ত্যাগের পর কৃষ্ণ নতুন এক শহর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন বোধ করেন। এক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। প্রথমটির মতে কৃষ্ণ গরুড়ে (কৃষ্ণের বাহন) চড়ে ভারতের উত্তর-পশ্চিমের সাউরাস্ট্রে আসেন এবং সেখানে দ্বারকা নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় কাহিনী অনুসারে নতুন এই শহর প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষ্ণ নির্মাণের দেবতাবিশ্বকর্মারসাহায্য নেন। বিশ্বকর্মা কৃষ্ণকে জানান, যদি সমুদ্রের দেবতাসমুদ্রদেবতাদেরকে কিছু জমি প্রদান করেন শুধুমাত্র তবেই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। কৃষ্ণ তখন সমুদ্রদেবের পূজা করেন এবং সমুদ্রদেব খুশি হয়ে কৃষ্ণকে ১২ যোজন (৭৭৩ বর্গ কি.মি.) জমি প্রদান করেন। জমি পাওয়ার পর বিশ্বকর্মা সেখানে দ্বারকা নগরী নির্মাণ করেন।

পুরাণকালে বৈদিক ভারতীয়রা দ্বারকা সৌরাষ্ট্রের রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মথুরা থেকে চলে আসা যাদবগণ এখানে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যখন শহরটি "কৌশালি" নামে পরিচিত ছিল। এই সময়েই এই শহরটির পুনর্নির্মাণ হয় এবং এর নামকরণ করা হয় দ্বারকা

 

দ্বারকা নগরীর নকশা বিবরণ

মহাভারত অনুযায়ী দ্বারকা ছিল শ্রীকৃষ্ণ তথা যদুবংশীয়দের রাজধানী। খুব ভালোভাবে পরিকল্পনা করেই দ্বারকা নগরী নির্মাণ করা হয়েছিল। পুরো শহরটি মোট ৬টি ভাগে বিভক্ত ছিল। আবাসিক বাণিজ্যিক এলাকা, চওড়া রাস্তা, নগরচত্বর, সোনা, রূপা দামী পাথর দিয়ে নির্মিত বিশাল বিশাল প্রাসাদ, জনগণের সুযোগ সুবিধার জন্য নানা স্থাপনা সহ নানা উদ্যান লেক ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠেছিল দ্বারকা নগরী। প্রায় লক্ষ ছোটবড় প্রাসাদ ছিল নগরীতে। এখানে ছিলসুধর্ম সভানামের এক বিশাল হলঘর, যেখানে নানা ধরনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হতো। গোটা নগরীটি ছিল জলবেষ্টিত। এটি ছিল মূলত একটি দ্বীপ-নগর। চারপাশে বেষ্টিত জলরাশি দ্বারকাকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতো। দ্বারকা নগরী ছিল দুভাগে বিভক্ত। একটি মূল দ্বারকা নগরী অন্যটি দ্বীপ-দ্বারকা, যা মূলতবেট-দ্বারকানামেই বেশি প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন সূত্রানুযায়ী এই দুই দ্বারকার মাঝে ছিল অগভীর সমুদ্র। মূল অংশের সাথে দ্বীপ শহরটি নানা ব্রিজ বন্দর দ্বারা যুক্ত ছিল। জোয়ারের সময় মূল দ্বারকা থেকে দ্বীপ দ্বারকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। আবার ভাটার সময় যুক্ত হয়ে যেত দুটি। কৃষ্ণ তার বাকি জীবন দ্বারকা নগরীতেই অতিবাহিত করেছিলেন। শেষের দিকে তিনি ভাল্কা তীর্থের এক বনে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দুর্ঘটনাবশত এক শিকারীর তীর বিদ্ধ হয়ে নিহত হন। কৃষ্ণের মৃত্যুর পর গোটা দ্বারকা নগরী এক বিশাল বন্যায় সমুদ্রের গভীরে হারিয়ে যায়।

 n 200 খ্রিস্টাব্দে, দ্বারকের দ্বিতীয় রাজা বাসুদেব মহাক্ষত্রিয় রুদ্রদমাকে পরাজিত করেছিলেন। রুদ্রদমার মৃত্যুর পরে, তাঁর স্ত্রী, রানী ধীরাদেবী তার ভাই পুলুমাভিকে আমন্ত্রণ করেছিলেন, শাসনের নির্দেশনা চেয়েছিলেন। রুদ্রদম বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং দ্বারকায় কৃষ্ণের পূজা করেছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি বজ্রনাভ একটি ছত্রি (একটি ছাতার ধরণের স্মৃতিস্তম্ভ) তৈরি করেছিলেন এবং তাতে কৃষ্ণের একটি মূর্তি দেবদেব করেছিলেন। 

আদি শঙ্করাচার্য দেশের চার কোণে প্রতিষ্ঠিত চারটি ধামের মধ্যে একটি (ধর্মীয় আসন) সন্ন্যাস কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি দ্বারকা মন্দির কমপ্লেক্সের অংশ হিসাবে গঠিত। 885 খ্রিস্টাব্দে, মন্দিরটি শঙ্করাচার্য পিঠের (কেন্দ্র) প্রধান নৃশিনহাশ্রমা সংস্কার করেছিলেন। 1241 সালে, মোহাম্মদ শাহ দ্বারকা আক্রমণ করেছিলেন এবং মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্থ করেছিলেন।

এই যুদ্ধের সময়, পাঁচ জন ব্রাহ্মণ (বিরাজী ঠাকর, নাথু ঠাকর, করাসন ঠাকর, ভালজী ঠাকর, এবং দেবসী ঠাকর) তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, মারা গিয়েছিলেন এবং শহীদ হিসাবে সম্মানিত হন।

1473 সালে গুজরাত সুলতান মাহমুদ বেগদা শহরটি দখল করে দ্বারকা মন্দিরটি ধ্বংস করেছিলেন। জগৎ মন্দির বা দ্বারাকাধিস মন্দিরটি পরে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল।

বল্লভ আচার্য দ্বারকাধিশের একটি মূর্তি পুনরুদ্ধার করেছিলেন,  মুসলিম আক্রমণের সময় তিনি লাডভা গ্রামে যাওয়ার আগে এটি একটি স্টেপওয়েলে লুকিয়ে রেখেছিলেন, যা সাবিত্রী ভাভ নামে পরিচিত।1551 সালে, যখন তুর্কি আজিজ দ্বারকা আক্রমণ করেছিলেন, প্রতিমাটি বেত দ্বারকা দ্বীপে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।


* তথ্যসুত্র: উইকিপিয়া ও  বিভিন্ন ওয়েবসাইট।