অঙ্গরাজ্যের নামের ইতিকথা
মানবসভ্যতা
বিস্তৃতির ইতিহাস থেকে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্য তথা এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠে। কালের পরিক্রমায় খাদ্যের সন্ধানে তারা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যায়। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের
বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন জনবসতি গড়ে ওঠে। ইউরোপ মহাদেশের পশ্চিমে বিরাট জলরাশি তথা আটলান্টিক মহাসাগর। এই জলরাশি দেখে
তাদের ধারণা জন্মেছিল যে পৃথিবীর স্থলভাগের
সীমানা এখানেই শেষ। সে কারণে হাজার
হাজার বছর ধরে আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমপারের এই বিরাট ভূভাগ
তাদের নিকট অজানাই ছিল। বিতর্ক আছে, এই অজানা দেশটি
কে প্রথম আবিষ্কার করল। বিতর্ক আছে, এই অজানা ভূভাগে
কারা প্রথম বসবাস শুরু করে। এই ভূভাগ আবিষ্কারের
সঙ্গে দুজনের নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়। তাঁদের একজন হলেন আমেরিগো ভেসপুচি, অন্যজন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। এই আমেরিগোর নামানুসারেই
অচিন দেশটির নাম হয়েছে আমেরিকা। দক্ষিণ অঞ্চলের অনেকগুলো দেশ নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ। অধুনা যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকা ও
কানাডা নিয়ে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ। প্রাথমিকভাবে ১৩টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে আমেরিকার জন্ম। পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা বৃদ্ধি
পেয়ে এখন অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা ৫০টি। আমেরিকা নামের উৎপত্তি নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা আছে। অঙ্গরাজ্যগুলোর নামকরণের অনেক কথা আছে। দেখা যাক সেগুলো কী—
১.
আলাবামা: এই আলাবামা নামকরণ
নিয়ে অনেক মতান্তর আছে। অনেকে বলে থাকেন যে ‘আলাবামা’ শব্দটি ক্রিক ইন্ডিয়ান ভাষার একটি শব্দ। এই শব্দের অর্থ
‘গোত্রীয় শহর’। আবার অনেকের
ধারণা, এটি একটি চোক্তাও ইন্ডিয়ান ভাষার শব্দ। এর অর্থ ঝোপঝাড়
বা ঘন জঙ্গলপূর্ণ এলাকা।
রাজ্যটি ১৮১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ২২তম
অঙ্গরাজ্য হিসেবে আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত হয়।
২.
আলাস্কা: ‘আলাস্কা’ শব্দটি এসেছে এলেউসিয়ান ‘আলাকশাক’ শব্দ থেকে। ‘আলাকশাক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘গ্রেট ল্যান্ড’ বা সামুদ্রিক জলবেষ্টিত
উপদ্বীপ। রাশিয়ানদের পক্ষে ডেনমার্কের নাগরিক অভিযাত্রী ভাইটাস বেরিং ও রুশ অভিযাত্রী
আলেস্কি চেরিকোভ যৌথভাবে ১৭৪১ সালে আলাস্কার মূল ভূখণ্ড আবিষ্কার করেন। এলিউসিয়ান দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কারও তাঁদের কৃতিত্ব। ১৮৬৭ সালে আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট উইলিয়াম
সেউয়ার্ড মাত্র ৭২ লাখ ডলারের
বিনিময়ে রুশদের কাছ থেকে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই বিশাল ভূখণ্ড
কিনে নেন। ভূখণ্ডের তুলনায় এর খরিদমূল্য এতই
নগণ্য ছিল যে প্রতি একরের
ক্রয়মূল্য ছিল মাত্র দুই সেন্ট।
৩.
অ্যারিজোনা: অ্যারিজোনা নামটি এসেছে অ্যাজটেক ইন্ডিয়ান শব্দ ‘অ্যারিজুমা’ থেকে। ‘অ্যারিজুমা’ অর্থ রৌপ্যখচিত। আবার অনেকে বলেন যে এই শব্দের
উদ্ভব হয়েছে ‘পিমা ইন্ডিয়ান’ শব্দ ‘অ্যারিজোনাক’ থেকে। এর অর্থ ‘লিটল
স্প্রিং প্লেস’ বা ছোট্ট ঝরনার
দেশ। ১৯১২ সালে ৪৮তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে অ্যারিজোনা আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত হয়।
৪.
আরাকানশাস: ‘আকানসা’ শব্দের বিকৃত ফ্রেঞ্চ উচ্চারণ ‘আরাকানসাস’। মূল ‘আকানসা’
শব্দের অর্থ ‘ডাউন স্ট্রিম প্লেস’, অর্থাৎ স্রোতধারার নিম্নাঞ্চল। ১৮৩৬ সালে ২৫তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে আরাকানসাস আমেরিকায় যোগ দেয়।
৫.
ক্যালিফোর্নিয়া: ১৫৩৩ খ্রিষ্টাব্দে স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা সর্বপ্রথম এই ভূখণ্ডে আসে।
১৫১০ সালে স্প্যানিশ ভাষায় রচিত ‘Las Serges de
Esplandian’ নামে একটি প্রেম উপাখ্যানে কল্পিত ভূস্বর্গতুল্য একটি দ্বীপাঞ্চলের নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ
করা হয় ক্যালিফোর্নিয়া। আবার অনেকে
মনে করেন, ওই কল্পিত দ্বীপাঞ্চলের
কল্পিত রানি ক্যালাফিয়ার নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ
করা হয় ক্যালিফোর্নিয়া। বর্তমান মেক্সিকো
রাজ্যের বাজা ক্যালিফোর্নিয়া ও বাজা ক্যালিফোর্নিয়া
সুর, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যসহ সমগ্র এলাকাই ক্যালিফোর্নিয়া নামে পরিচিত ছিল। ১৮৪৭ সালে এই এলাকা আলাদা
অঙ্গরাজ্য হিসেবে আমেরিকার অঙ্গীভূত হয়।
৬.
কলোরাডো: ‘কলোরাডো’ স্প্যানিশ ভাষার একটি শব্দ, যার অর্থ লাল রং বা লাল
রঙে রঞ্জিত। এই এলাকার পর্বতশিখর
এলাকাসমূহের লাল রঙের বেলে পাথর এবং ওই সব এলাকায়
স্বর্ণখনি প্রাপ্তির কারণে অঞ্চলটি কলোরাডো নামে পরিচিতি লাভ করে। এই রাজ্যের পাহাড়ি
এলাকা, নদী ও সমভূমি অঞ্চলসমূহের
বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য এই এলাকাকে কাব্যিক
ভাষায় ‘কালারফুল কলোরাডো’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। অঙ্গরাজ্য হিসেবে ১৮৬১ সালে অঙ্গরাজ্যটি আমেরিকায় একীভূত হয়।
৭.
কানেকটিকাট: ‘কানেকটিকাট’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে রেড ইন্ডিয়ান ভাষার ‘কুইনেহটুককুট’ শব্দ থেকে। এর অর্থ ‘জোয়ার-ভাটার দীর্ঘ নদীর অববাহিকা অঞ্চল’। অন্য একটি
মতে, এই রাজ্যসীমার মধ্যে
প্রবাহিত কানেকটিকাট নদীর নামানুসারে এই রাজ্যের নামকরণ
হয়েছে।
৮.
ডেলাওয়ারা: এই অঞ্চলের ডেলেওয়ারা
নদী ও ডেলেওয়ারা উপসাগরের
নামে এই অঞ্চল পরিচিতি
লাভ করেছে। আবার অন্য একটি মতে, ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের জেমস টাউন শহরের গভর্নর স্যার থোমাস ওয়েস্টের (যিনি ছিলেন লর্ড অব ডেলেওয়ার) সম্মানে
এই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে।
৯.
ফ্লোরিডা: স্প্যানিশ আবিষ্কারক নাবিক পনস ডি লিওন ১৫১৩
খ্রিষ্টাব্দের ইস্টার ডে-তে এই
অঞ্চলকে ‘পাস্কুয়া ফ্লোরিডা’ নামে অভিহিত করেন। ‘পাস্কুয়া ফ্লোরিডা’র অর্থ ‘ফ্লাওয়ারিং
ইস্টার’। স্প্যানিশরা তাদের
দেশে ইস্টার ফিস্টের দিনে ফুল দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল সুসজ্জিত করত। সম্ভবত এই এলাকার ফুলে
ফলে সুসজ্জিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
১০.
জর্জিয়া: গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের রাজা
জর্জ আগাস্টাস, অর্থাৎ রাজা দ্বিতীয় জর্জের নামানুসারে এই রাজ্যের নাম
রাখা হয় জর্জিয়া। জর্জিয়া
১৭৮৮ সালে আমেরিকার চতুর্থ অঙ্গরাজ্য হিসেবে একীভূত হয়।
১১.
হাওয়াই: ‘হাওয়াই’ শব্দটি এসেছে এই এলাকার আদি
বাসিন্দাদের ভাষার ‘অহাইয়ি’ শব্দ থেকে। ‘অহাইয়ি’ শব্দের অর্থ ‘হোমল্যান্ড’ বা মাতৃভূমি। ১৭৭৮
সালে নাবিক ক্যাপ্টেন কুক এই দ্বীপাঞ্চল আবিষ্কার
করেন। ইংল্যান্ডের স্যান্ডুইস এলাকার আর্ল অব স্যান্ডুইসের সম্মানে
এই দ্বীপাঞ্চলের নাম রাখা হয় স্যান্ডুইস আইল্যান্ডস।
এই এলাকার তদানীন্তন রাজা প্রথম কামেনহামেহা ১৮১৯ সালে এই অঞ্চলের দ্বীপাঞ্চলগুলোকে
অন্তর্ভুক্ত করে এর নাম রাখেন
কিংডম অব হাওয়াই।
১২.
ইলিনয়: ‘ইলিনয়’ শব্দটি এসেছে ফ্রেঞ্চ ভাষায় ভাষান্তরিত স্থানীয় ইন্ডিয়ান ভাষার একটি শব্দ থেকে। ইন্ডিয়ান ভাষার ওই শব্দটির অর্থ
হলো ‘ওয়ারির’ বা ‘ট্রাইব অব সুপিরিয়র মেন’।
১৩.
ইন্ডিয়ানা: স্থানীয় ইন্ডিয়ান ভাষার শব্দভান্ডারের এই শব্দটির অর্থ
‘ল্যান্ডস অব ইন্ডিয়ান্স’ বা
ইন্ডিয়ানদের ভূমি।
১৪.
লোয়া: এই এলাকায় প্রবাহিত
লোয়া নদীর নামানুসারে এই নামটি এসেছে।
১৫.
কানসাস: ইন্ডিয়ান শব্দ ‘সিওউক্স’ ভাষান্তরিত শব্দ কানসাস-এর অর্থ হলো
‘সাউথ উইন্ড পিপল’, অর্থাৎ দক্ষিণা হাওয়ার মানুষ।
১৬.
কেনটাকি: আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের স্থানীয় ভাষার শব্দ ‘কেন-টাহ-টেন’ থেকে ‘কেনটাকি’ নামটি এসেছে। ‘কেন-টাহ-টেন’ শব্দের অর্থ ‘ল্যান্ড অব টুমরো’।
এর আরেকটি অর্থ ‘মিডো ল্যান্ড’।
১৭.
লুজিয়ানা: অভিযাত্রী আবিষ্কারক রেনে রবার্ট ক্যাভেলিয়ার সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এই এলাকায় আসেন।
তিনি ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইসের নামে এই এলাকার নামকরণ
করেন লুজিয়ানা। আমেরিকার তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট থোমাস জেফারসন ফ্রান্সের তদানীন্তন সম্রাট নেপোলিয়ানের কাছ থেকে ১৮০৩ সালে এই এলাকা কিনে
নেন। মূল লুজিয়ানা এলাকাটি বর্তমানে ১৩টি আলাদা আলাদা অঙ্গরাজ্যে বিভক্ত।
১৮.
মেইন: ‘মেইন’ শব্দটি ‘মেইন ল্যান্ড’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
আশপাশের অনেক দ্বীপ থেকে আলাদা ভূখণ্ড হিসেবে চিহ্নিত এই এলাকা ‘মেইন’
নামে পরিচিত। ১৮২০ সালে এই এলাকা ২৩তম
অঙ্গরাজ্য হিসেবে আমেরিকায় যোগদান করে।
১৯.
মেরিল্যান্ড: ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসের স্ত্রী হেনরিয়েটা মেরিয়ার নামানুসারে এই অঙ্গরাজ্যের নাম
করা হয় মেরিল্যান্ড।
২০.
ম্যাসাচুসেটস: এই নামটি এসেছে
এংলোকুইন ইন্ডিয়ান ভাষার শব্দ ‘মেস’ ও ‘ওয়াসছেট’ শব্দ
দুটি থেকে। ‘মেস’ অর্থ ‘গ্রেট’ বা বড় এবং
‘ওয়াসছেট’ অর্থ পাহাড়ি এলাকা।
২১.
মিশিগান: এই শব্দটি এসেছে
চিপেওয়া ইন্ডিয়ান শব্দ ‘মিশিগামা’ থেকে, যার অর্থ ‘গ্রেট ওয়াটার’ বা বড় জলাশয়
বা বড় হ্রদ।
২২.
মিনেসোটা: মিনেসোটা ডাকোটা ইন্ডিয়ান ভাষার প্রচলিত একটি শব্দ। এর অর্থ পানিতে
‘বিম্বিত যথা অনন্ত নীলাকাশ’। মিনেসোটা নদী
আর এই অঙ্গরাজ্যের অসংখ্য
হ্রদে আকাশের প্রতিবিম্বিত নীল আকাশের ছবি অপরূপ শোভার কারণেই এই নামের প্রচলন
হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
২৩.
মিসিসিপি: ধারণা করা হয়, ফ্রান্স দেশের মিসি-জিবি নদীর নামানুসারে এই এলাকার নাম
করা হয় ‘মিসিসিপি’। ফ্রান্স ভাষায়
মিসি-জিবি শব্দের অর্থ ‘বড় নদী’।
২৪.
মিজৌরি: অনেকেই ধারণা করে যে এই নামটি
উদ্ভব হয়েছে সিয়ক্স ইন্ডিয়ান ‘মিজৌরিস’ শব্দ থেকে, যার ভাবার্থ হচ্ছে ‘কাঠুরিয়া ক্যানো’ জনগোষ্ঠীর শহর।
২৫.
মনটানা: ‘মনটানা’ স্প্যানিশ ভাষা থেকে নেওয়া একটি শব্দ, যার অর্থ পাহাড়ি এলাকা। এই অঙ্গরাজ্যের পশ্চিমাংশ
এলাকা পর্বতমালা ও বনভূমিবিশিষ্ট এবং
পূর্বাংশ অনাবাদি মালভূমি।
২৬.
নেব্রাস্কা: নেব্রাস্কা শব্দটি ‘ওটো ইন্ডিয়ান’ ভাষা থেকে নেওয়া, যার ভাবার্থ স্থির বা অটল জল।
এই এলাকায় প্রবাহিত ‘প্লাটে রিভার’ জলরাশির সঙ্গে এই নামটি সম্পর্কিত।
২৭.
নেভাদা: ‘সিনেমা নেভাদার’ নামে পরিচিত স্পেন দেশের একটি পর্বতমালার নামানুসারে এই এলাকায় প্রথমে
আগত স্পেনীয়রা এই নামকরণ করেন।
২৮.
নিউ হ্যাম্পশায়ার: ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ার নামক এলাকার নামানুসারে ক্যাপ্টেন জন ম্যাসন এই
এলাকার নামকরণ করেন নিউ হ্যাম্পশায়ার। প্রথমে যে ১৩টি ব্রিটিশ
কলোনি নিয়ে আমেরিকা গঠিত হয়েছিল, তার মধ্যে এটা ছিল নবম রাজ্য।
২৯.
নিউজার্সি: নতুন এলাকা আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে এই এলাকায় প্রথম
আগতদের মধ্যে ব্রিটিশ নাগরিক হেনরি হাডসন একজন। হাডসন ব্রিটিশ নাগরিক হলেও তিনি ডাচদের পক্ষ থেকে ডাচদের অর্থানুকূল্যে এই এলাকায় অধিকার
প্রতিষ্ঠা করে এই এলাকার নামকরণ
করেন নিউ নেদারল্যান্ডস। ১৬৬৪ সালে ডাচ আধিপত্য পরাভূত করে ব্রিটিশরা এই এলাকা দখল
করে নেয়। ইংলিশ চ্যানেলের জার্সি নামক একটি ক্ষুদ্র দ্বীপের নামানুসারে এর নামকরণ করা
হয় নিউজার্সি। এই হেনরি হাডসনের
নামানুসারে বর্তমান হাডসন নদীর নামকরণ করা হয়।
৩০.
নিউ মেক্সিকো: অ্যাজটেক ইন্ডিয়ান শব্দ ‘মেক্সিকো’ থেকে এই নামটি এসেছে।
‘মেক্সিকো’ শব্দের অর্থ মেক্সিকোদের বাসস্থান। স্প্যানিশরা ১৫৬১ সালের দিকে এই এলাকায় আসে।
রিও গ্র্যান্ডে নদীর উত্তর পার্শ্বের ভূভাগের নামকরণ করা হয় ‘নুএভো মেক্সিকো’। ‘নুএভো মেক্সিকো’
ইংরেজি ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে ‘নিউ মেক্সিকো’ হয়। মেক্সিকো-আমেরিকান যুদ্ধে বর্তমান মেক্সিকো দেশের যে বিরাট এলাকা
আমেরিকা দখল করে নেয়, সেই এলাকা নিউ মেক্সিকো নামে আমেরিকার ৪৭তম রাজ্য হিসেবে ১৯১২ সালের ৬ জানুয়ারি তারিখে
অন্তর্ভুক্ত হয়।
৩১.
নিউইয়র্ক: নতুন জগৎ আবিষ্কারের পরপরই ডাচরা বর্তমান নিউইয়র্ক নামে পরিচিত এলাকায় তাদের কলোনি প্রতিষ্ঠা করে। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম
রাখে নিউ আমস্টারডাম। ১৬৬৪ সালে ব্রিটিশরা ডাচদের নিকট এই অঞ্চল জবরদখল
করে নিয়ে ব্রিটিশ কলোনি প্রতিষ্ঠা করে। ইংল্যান্ডের ডিউক অব ইয়র্কের সম্মানে
নিউ আমস্টারডাম নাম পরিবর্তন করে এই ব্রিটিশ কলোনির
নাম রাখা হয় নিউইয়র্ক।
৩২.
নর্থ ক্যারোলিনা: ল্যাটিন ভাষার ‘ক্যারোলাস’ শব্দের ইংরেজি রূপ ‘চার্লস’। ইংল্যান্ডের রাজা
চার্লস প্রথমের সম্মানে এই ব্রিটিশ কলোনির
নাম রাখা হয় ক্যারোলিনা। ১৭২৯
সালে এই কলোনিকে দ্বিখণ্ডিত
করে উত্তরের অংশের নাম রাখা হয় নর্থ ক্যারোলিনা।
১৭৮৯ সালে নর্থ ক্যারোলিনা দ্বাদশ অঙ্গরাজ্য হিসেবে আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত হয়।
৩৩.
নর্থ ডাকোটা: ‘ডাকোটা’ সিউক্স ইন্ডিয়ান ভাষার একটি শব্দ, যার অর্থ ‘বন্ধু’। অধুনা নর্থ
ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, মনটানা এবং ওয়াইওমিং এলাকার সমগ্র অঞ্চল ডাকোটা নামে পরিচিত ছিল। ১৮৮৯ সালের ২ নভেম্বর নর্থ
ডাকোটা ও সাউথ ডাকোটা
৩৯ ও ৪০তম অঙ্গরাজ্য
হিসেবে আমেরিকায় অঙ্গীভূত হয়।
৩৪.
ওহাইও: ‘ওহাইও’ শব্দটি ‘ইরোকুইস’ ইন্ডিয়ান ভাষার একটি শব্দ, যার ভাবার্থ ‘গুড রিভার’। এই ইন্ডিয়ান
ভাষার শব্দটি ফরাসিরা ফ্রেঞ্চ ভাষায় ‘লা বেলে রিভারে’
হিসেবে ভাষান্তরিত করেছিল, যার অর্থ ‘বিউটিফুল রিভার’। ১৮০৩ সালের
১ মার্চ তারিখে এই অঙ্গরাজ্যটি আমেরিকার
অন্তর্ভুক্ত হয়।
৩৫.
ওকলাহোমা: ওকলাহোমা ‘চোক্তাও ইন্ডিয়ান’ ভাষার একটি যুক্ত শব্দ। ‘ওকলা’ শব্দের অর্থ জনগণ বা জনগোষ্ঠী আর
‘হোমা’ শব্দের অর্থ ‘লাল’ অর্থাৎ লাল বর্ণের জনগোষ্ঠী। স্পেন দেশে প্রচলিত উপাখ্যান খ্যাত ‘হৃত সোনার খনির নগর’-এর খোঁজে আসা
স্প্যানিশ অভিযাত্রী করোনাডো ১৫৪১ সালে এই অঞ্চলে প্রথম
আসেন। ১৯০৭ সালের ১৬ নভেম্বর ৪৬তম
অঙ্গরাজ্য হিসেবে এই রাজ্যটি আমেরিকার
অন্তর্ভুক্ত হয়।
৩৬.
অরিগন: ১৮৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে
আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত হওয়া অরিগন রাজ্যটির এই নামকরণের সঠিক
কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ১৭১৫ সালে ফ্রেঞ্চ মানচিত্রকর প্রণীত ভূ-মানচিত্রে ‘উইসকনসিন’
নদীকে ‘কোয়ারিকোন-সিন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ মনে করে যে ‘কোয়ারিকোন’ শব্দটিই বর্ণ বিপর্যয়ের ফলে বা অপভ্রংশে ‘অরিগন’
নামটির উদ্ভব হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে এ এলাকার
একটি নদী আদি ইন্ডিয়ান ভাষায় ‘ঔরাগন’ নামে পরিচিত ছিল। এই ‘ঔরাগন’ থেকেই ‘অরিগন’ নামের উদ্ভব।
৩৭.
পেনসিলভানিয়া: ইংল্যান্ডের নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল উইলিয়াম পেনের কাছে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস দেনাগ্রস্ত ছিলেন। সেই দেনার পরিবর্তে রাজা চার্লস অ্যাডমিরাল উইলিয়াম পেনের পুত্র কুয়েকার উইলিয়াম পেনকে ১৬৮১ সালে বর্তমান পেনসিলভানিয়া নামে পরিচিত এলাকাটির স্থায়ী পত্তনি দেন। সে সময় এই
ভূখণ্ড ছিল একটি বনাঞ্চল। ‘সেলভানিয়া’ শব্দের অর্থ ‘বনভূমি’। কালক্রমে ‘সেলভানিয়া’
শব্দের সঙ্গে এই বনভূমির মালিকের
নাম যুক্ত হয়ে ‘পেনসিলভানিয়া’ হিসেবে এই এলাকা পরিচিতি
লাভ করে।
৩৮.
রোড আইল্যান্ড: সমুদ্র অভিযাত্রী গিওভানি ডা ভেরাজানোর একটি
লেখায় ‘রোড আইল্যান্ড’ নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর লেখায় ‘নারাগান্সেট’ উপ-সাগরের মোহনায়
অবস্থিত এই দ্বিপাঞ্চলটির ভূপ্রকৃতি
ভূমধ্যসাগর অঞ্চলীয় ‘গ্রিক রোডস অব মেডিটেরিয়ান’ এর
ভূপ্রকৃতির সঙ্গে মিল থাকার কারণে তিনি এই দ্বীপটিকে ‘রোড
আইল্যান্ড’ নামে অভিহিত করেন। ১৭৯০ সালের ২৯ মে তারিখে
ত্রয়োদশ অঙ্গরাজ্য হিসেবে রোড আইল্যান্ড আমেরিকার অঙ্গীভূত হয়।
৩৯.
সাউথ ক্যারোলিনা: ‘ক্যারোলিনা’ নামের ইতিবৃত্ত ‘নর্থ ক্যারোলিনা’ অঙ্গরাজ্যের অনুরূপ। ১৭২৯ সালে ‘ক্যারোলিনা’ উত্তর ও দক্ষিণ দুই
অঞ্চলে বিভক্ত হয়। ‘সাউথ ক্যারোলিনা’ ১৭৮৮ সালে অষ্টম অঙ্গরাজ্য হিসেবে আমেরিকায় যোগদান করে।
৪০-৪১. সাউথ ডাকোটা ও নর্থ ডাকোটা:
‘ডাকোটা’ সিইওক্স ইন্ডিয়ান ভাষার একটি আঞ্চলিক শব্দ, যার ভাবার্থ ‘বন্ধু’। প্রেসিডেন্ট জেমস
বুচানন ১৮৬১ সালে বর্তমান সাউথ ডাকোটা, নর্থ ডাকোটা এবং ওয়েইমিং অঞ্চলটিকে ‘ডাকোটা টেরিটরি’ হিসেবে ঘোষিত একটি বিলে স্বাক্ষর করেন। ১৮৮৯ সালের ২ নভেম্বর তারিখে
নর্থ ডাকোটা ও সাউথ ডাকোটা
৩৯তম ও ৪০তম রাজ্য
হিসেবে আমেরিকায় যোগদান করে।
৪২.
টেনেসি: এই এলাকার আদি
আমেরিকান বাসিন্দাদের ‘চেরোকি’ ভাষার একটি শব্দ ‘টেনেসি’, যার অর্থ ‘নদী’। এই অঞ্চলে
আদি বাসিন্দাদের একটি পল্লির নাম ছিল ‘টেনাসি’। সেই ‘টেনাসি’
শব্দের পরিবর্তিত রূপ টেনেসি। ১৭৯৬ সালের ১ জুন তারিখে
টেনেসি ১৬তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে যোগ দেয় আমেরিকায়।
৪৩.
টেক্সাস: টেক্সাস নামটি এসেছে ‘কাড্ডো’ ইন্ডিয়ান ভাষার শব্দ ‘লেইসাস’ থেকে, এর অর্থ বন্ধু
বা মিত্র। ষোড়শ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে স্পেন অভিযাত্রীরা এই এলাকায় প্রচলিত
নাম ‘লেইসাস-কে ‘টেয়াস’ বা ‘টেজাস’ হিসেবে উচ্চারণ করত এবং পরবর্তীতে ধ্বনি বিপর্যয়ের ফলে টেয়াস বা টেজাস হয়েছে
‘টেক্সাস’।
৪৪.
উতাহ: এই নামটির উদ্ভব
হয়েছে ‘আপাচি ইন্ডিয়ান’ শব্দ ‘উত্তাহিহ’ শব্দ থেকে। ‘উত্তাহিহ’ শব্দের অর্থ ‘উঁচু এলাকার বাসিন্দা’। ইউরোপ মহাদেশ
থেকে আসা নবাগতরা এখানকার পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত স্থানীয় লোকদের ‘উটেজ’ নামে অভিহিত করত এবং এই অঞ্চলকে ‘ল্যান্ড
অব উটেজ’ বলত। এই ‘উটেজ’ শব্দ থেকেই ‘উতাহ’ নামটি এসেছে।
৪৫.
ভারমন্ট: ফরাসি অভিযাত্রী স্যামুয়েল ডে চ্যামপ্লান তাঁর
তৈরি করা মানচিত্রে এই সবুজ শ্যামলিমাময়
পাহাড়ি এলাকাকে ‘ভার্ড মন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই ‘ভার্ড মন্ট’ উচ্চারণ বিপর্যয়ের ফলে ‘ভারমন্ট’ হয়েছে।
৪৬.
ভার্জিনিয়া: উত্তর আমেরিকার যেসব অঞ্চল ফরাসি ও স্প্যানিশদের দখলে
ছিল না, সেই সব অঞ্চলকেই একসময়
ভার্জিনিয়া বলা হতো। ভার্জিনিয়া নামটি এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘ভার্জিন’ থেকে। ভার্জিন শব্দের অর্থ কুমারী, অর্থাৎ অবিবাহিতা নারী। ইংল্যান্ডের রাজমুকুট পরিহিতা রানি প্রথম এলিজাবেথ ছিলেন চিরকুমারী। সে জন্য তাঁকে
‘ভার্জিন কুইন’ হিসেবে অবিহিত করা হতো। সেই ভার্জিন কুইনের সম্মানে বর্তমান ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের এই নামকরণ করা
হয়। ভার্জিনিয়া ১৭৮৮ সালের ২৫ জুন দশম
অঙ্গরাজ্য হিসেবে আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত হয়।
৪৭.
ওয়াশিংটন: আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের নামানুসারে এ দেশের ৪২তম
অঙ্গরাজ্যের নামকরণ করা হয় ওয়াশিংটন।
৪৮.
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া: যেসব অঞ্চল একসময় ভার্জিনিয়া নামে পরিচিত ছিল, সেই এলাকার পশ্চিম অঞ্চলের কয়েকটি কাউন্টি নিয়ে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্য।
৪৯.
উইসকনসিন: এই অঞ্চলের আদি
বাসিন্দা ‘চিপ্পিয়া’ ইন্ডিয়ান জনগোষ্ঠীর কথ্য ভাষার ‘ঔয়িকোনসিন’ শব্দের অর্থ ‘গ্রাসি প্লেস’, অর্থাৎ তৃণভূমি বা চারণক্ষেত্র। বর্ণ
বিপর্যয় বা উচ্চারণ বিপর্যয়ের
ফলে ‘ঔয়িকোনসিন’ হয়েছে ‘উইসকনসিন’। ১৮৪৮ সালের
২৯ মে তারিখে এই
অঙ্গরাজ্য আমেরিকায় যুক্ত হয়।
৫০.
ওয়াইওমিং: ‘ওয়াইওমিং’ স্থানীয় ইন্ডিয়ান ভাষার একটি শব্দ। এর অর্থ বিস্তীর্ণ
তৃণভূমি। ১৮৯০ সালের ১০ জুলাই এই
অঙ্গরাজ্য আমেরিকায় যুক্ত হয়।