পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা ও পৃথিবীর ভবিষ্যত

সৌরজগতে মোট টি গ্রহ আছে সূর্য থেকে দুরত্ব অনুসারে গ্রহগুলি হল - বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস নেপচুন   দুরত্ব অনুসারে পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় গ্রহ,  এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন গ্রহের অন্যতম।  পৃথিবী তার অক্ষ বা মেরুদন্ডের উপর ভর করে নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে অনবরত ঘুরে চলেছে এই গতির ফলে দিনরাত্রি হয় হয় বলে একে আবর্তন বা আহ্নিক গতি বলে    আবর্তন গতির সময় পৃথিবীর কোনো স্থান সূর্যের সামনে থাকে আবার কোনো স্থান সূর্যের বিপরীতে থাকে। পৃথিবীর যে স্থান সূর্যের সামনে থাকে সেখানে দিন হয় আর তার বিপরীত স্থানে হয় রাত।



সৌরদিন (Solar day):- সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী তার অক্ষের উপর ভর করে সম্পূর্ণরূপে একবার পাক খেতে ২৪ ঘন্টা সময় নেয় একে 'সৌরদিন' বলে

নাক্ষত্রদিন (Solar day):- সুর্য ছাড়া অন্য কোনো নক্ষত্রের হিসাবে পৃথিবীর সম্পূর্ণ একবার আবর্তনের সময় লাগে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪০ সেকেন্ড একে নাক্ষত্রদিন (Solar day) বলে   নিরক্ষরেখায় এই বেগ 1667 KM/h

পৃথিবী থেকে সূর্যের মধ্যে গড় দুরত্ব থাকে প্রায় ১৫ কোটি কিমি. পৃথিবী পৃষ্ঠের সবচেয়ে উঁচু অংশ ,৮৪৮ মিটার (মাউন্ট এভারেস্ট) এবং সবচেয়ে নীচু অংশ ১১,০৩৫ মিটার (প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা খাত)

পৃথিবী হলো মানুষ সহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবী এখন পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা ৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল অন্যান্য অজৈবিক অবস্থাগুলিতর ফলে একদিকে যেমন বায়ুজীবী জীবজগতের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি ওজন স্তর গঠিত হয়েছে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে একযোগে এই ওজন স্তরই ক্ষতিকর সৌর বিকিরণের গতিরোধ করে গ্রহের বুকে প্রাণের বিকাশ ঘটার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, আরও ৫০ কোটি বছর পৃথিবী প্রাণধারণের সহায়ক অবস্থায় থাকবে।

পৃথিবীর উপরিতল একাধিক শক্ত স্তরে বিভক্ত। এগুলিকে ভূত্বকীয় পাত বলা হয়। কোটি কোটি বছর ধরে এগুলি পৃথিবীর উপরিতলে এসে জমা হয়েছে। পৃথিবীতলের প্রায় ৭১% লবণাক্ত জলের মহাসাগর দ্বারা আবৃত। অবশিষ্টাংশ গঠিত হয়েছে মহাদেশ অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে। 

সূর্য চাঁদের সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে মোটামুটি ৩৬৫.২৬ সৌরদিনে বা এক নক্ষত্র বর্ষে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী নিজ অক্ষের ৬৬./ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে। এর ফলে এক বিষুবীয় বছর (৩৬৫.২৪ সৌরদিন) সময়কালের মধ্যে এই বিশ্বের বুকে ঋতুপরিবর্তন ঘটে থাকে। পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল চাঁদ। .৩৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল। চাঁদের গতির ফলেই পৃথিবীতে সামুদ্রিক জোয়ারভাঁটা হয় এবং পৃথিবীর কক্ষের ঢাল সুস্থিত থাকে। চাঁদের গতিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর গতিকে কমিয়ে আনছে। . বিলিয়ন থেকে . বিলিয়ন বছরের মধ্যবর্তী একাধিক গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষে গ্রহের উপরিতলের উপরি ভাগের পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। এই গ্রহের অধিবাসীরা প্রায় ২০০টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সমগ্র গ্রহটিকে বিভক্ত করে বসবাস করছে। 


নাম ব্যুৎপত্তি : 

 "পৃথিবী" শব্দটি সংস্কৃত। এর অপর নাম "পৃথ্বী" পৃথ্বী ছিল পৌরাণিক "পৃথুর" রাজত্ব। এর সমার্থক শব্দ হচ্ছে- বসুধা, বসুন্ধরা, ধরা, ধরনী, ধরিত্রী, ধরাতল, ভূমি, ক্ষিতি, মহী ইত্যাদি , পৃথিবীর অপর নাম "বিশ্ব" বা "নীলগ্রহ" প্রথম যখন নভোচারীরা মহাকাশে পাড়ি জমালেন এবং প্রথমবারের মতো মহাকাশে গিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকালেন, তারা দেখলেন এই নীল গ্রহকে কেন নীল লাগে। তারা আবিষ্কার করলেন, পৃথিবীর প্রায় ৭০%- পানিতে নিমজ্জিত এবং বাকি ৩০% এর কঠিন ভূপৃষ্ঠ। তাদের এই পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করেই এই পৃথিবীনীল গ্রহডাকনামটি অর্জন করেছে।

 

  ইংরেজি ভাষায় পরিচিত আর্থ (Earth) নামে, গ্রিক ভাষায় পরিচিত গাইয়া (Γαῖα) নামে, লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম "টেরা (Terra)

 

পৃথিবীর আনুমানিক ওজন প্রায় ,৬৯৭ X ১০১৮ টন বা কোটি কোটি কোটি টন


পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হল চাঁদ চাঁদের আয়তন পৃথিবীর ৫০ ভাগের ভাগ চাঁদের ব্যাস ,৪৭৬ কিমি. পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব প্রায় লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিমি. পৃথিবীর চারিদিকে বার পরিক্রমণ করতে চাঁদের সময় লাগে ২৭ দিন ঘন্টা চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে, তখন জোয়ারের সৃষ্টি হয়। নতুন কিম্বা ফুল মুনের পরপরই এরকম হয়ে থাকে।

 

তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন শক্তিও চাঁদ চুরি করে নেয়। আর সেকারণে পৃথিবীর গতিও প্রতি ১০০ বছরে প্রায় দশমিক মিলি-সেকেন্ড করে ধীর হয়ে যাচ্ছে।

 

উৎপত্তি : 

সৌরজগৎ সৃষ্টির মোটামুটি ১০০ মিলিয়ন বছর পর একগুচ্ছ সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়। আজ থেকে .৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী নামের গ্রহটি আকৃতি পায়, পায় লৌহের একটি কেন্দ্র এবং একটি বায়ুমণ্ডল। সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে দুটি গ্রহের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, সময় জুড়ে যায় গ্রহ দুটি। পৃথিবী নামক গ্রহের সঙ্গে চরম সংঘর্ষ হয়েছিল থিয়া নামে একটি গ্রহের। সংঘর্ষের সময় পৃথিবীর বয়স ছিল ১০ কোটি বছর। সংঘর্ষের জেরে থিয়া পৃথিবীর জুড়ে যায়, তৈরি হয় নতুন গ্রহ। সেই গ্রহটিতেই আমরা বাস করছি। তিনবার চন্দ্র অভিযানে পাওয়া চাঁদের মাটি এবং হাওয়াই অ্যারিজোনায় পাওয়া আগ্নেয়শিলা মিলিয়ে চমকে যান গবেষকরা। দুটি পাথরের অক্সিজেন আইসোটোপে কোনও ফারাক নেই।

 

আজ থেকে .৫৪ শত কোটি বছর আগে পৃথিবীর আদিমতম রূপটি গঠিত হয়। সূর্যের পাশাপাশি সৌরজগতের অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুগুলিও গঠিত হয় এগুলোর বিবর্তন ঘটতে থাকে। আদিম পৃথিবীটি গঠিত হতে প্রায় থেকে কোটি বছর লেগেছিল।

 

 

 

পৃথিবীর ভবিষ্যৎ :

পৃথিবীর প্রত্যাশিত দীর্ঘ-মেয়াদি ভবিষ্যৎ সূর্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আগামী . বিলিয়ন বছরের মধ্যে সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা আরো ১০% বৃদ্ধি পেতে পারে এবং আগামী . বিলিয়ন বছরের তা আরও ৪০% বৃদ্ধি পেতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে উদ্ভিদের উপর মারাত্বক প্রভাব পরবে।

উদ্ভিদহীনতার কারনে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন থাকবে না, এবং প্রাণী জগৎ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পরবর্তী বিলিয়ন বছরের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠের উপরের সকল পানি শুকিয়ে যাবে এবং সারা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০°সে (১৫৮°ফা)

বিলিয়ন বছরের মধ্যে সূর্যের আকারের পরিবর্তন হয়ে একটি রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানবে পরিনত হবে। বিভিন্ন মডেল থেকে এটা অনুমান করা যায় সূর্যের আকৃতি বৃদ্ধি পাবে প্রায় এইউ বা ১৫,০০,০০,০০০ কি.মি, যা এটির বর্তমান পরিধির তুলনায় ২৫০ গুন বেশি। পৃথিবীর ভাগ্য খুব ভালভাবে পরিষ্কার এই সময়ে। লোহিত দানব হিসাবে, সূর্য এই সময় তার ভরের প্রায় ৩০% হারাবে। তাই, জোয়ার-ভাটা বিহীন পৃথিবী, একটি কক্ষপথে সূর্যকে প্রায় . এইউ দূরত্বে প্রদক্ষিণ করবে, এই সময় নক্ষত্রটি তার সর্বোচ্চ পরিধিতে পরিণত হবে। বেঁচে থাকা বাকি জীব বৈচিত্র্যে বেশিরভাগ গুলো, কিন্তু সব নয় সূর্যের বাড়তে থাকা উজ্জ্বলতা কারণে মারা যাবে , জোয়ার-ভাটার প্রভাব না থাকার কারণে পৃথিবীর কক্ষপথ এক সময় হ্রাস পাবে এবং সূর্য এটিকে টেনে নিবে নিজের দিকে, ফলাফলস্বরূপ পৃথিবী সূর্যের পরিমণ্ডলে প্রবেশ করবে এবং এক সময় বাষ্পে পরিণত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন