ইন্টারনেট




আন্তর্জাল বা ইন্টারনেট হল সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যেখানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ড্যাটা আদান-প্রদান করা হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে অনেকে ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে সমার্থক শব্দ হিসেবে গণ্য করলেও প্রকৃতপক্ষে শব্দদ্বয় ভিন্ন বিষয় নির্দেশ করে।



ইন্টারনেট হচ্ছে ইন্টারকানেক্টেড নেট্ওয়ার্ক(interconnected network) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটা বিশেষ গেটওয়ে বা রাউটারের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলো একে-অপরের সাথে সংযোগ করার মাধ্যমে গঠিত হয়। ইন্টারনেটকে প্রায়ই নেট বলা হয়ে থাকে।

যখন সম্পূর্ণ আইপি নেটওয়ার্কের আন্তর্জাতিক সিস্টেমকে উল্লেখ করা হয় তখন ইন্টারনেট শব্দটিকে একটি নামবাচক বিশেষ্য মনে করা হয়।

ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব দৈনন্দিন আলাপচারিতায় প্রায়ই কোন পার্থক্য ছাড়া ব্যবহৃত হয়। যাইহোক, ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব একই নয়। ইন্টারনেটের হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার পরিকাঠামো কম্পিউটারসমূহের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে। বিপরীতে, ওয়েব ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রদত্ত পরিষেবাগুলির একটি। এটা পরস্পরসংযুক্ত কাগজপত্র এবং অন্যান্য সম্পদ সংগ্রহের, হাইপারলিংক এবং URL-দ্বারা সংযুক্ত।

১৯৬০-এর দশকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি বা আরপা (ARPA) পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এই নেটওয়ার্ক আরপানেট (ARPANET) নামে পরিচিত ছিল। এতে প্রাথমিকভাবে যুক্ত ছিল।

ইন্টারনেটের ইতিহাস শুরু হয়, ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের অগ্রগতির সাথে সাথে ১৯৫০ সালে। ইন্টারনেট সম্পর্কে জনসাধারণ প্রথম ধারণা প্রবর্তিত হয়েছিল, যখন কম্পিউটার বিজ্ঞান অধ্যাপক লিওনার্ড ক্রাইনরক তার গবেষণাগার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) থেকে অর্পানেটের মাধ্যমে একটি বার্তা স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআরআই) তে পাঠান। নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের দ্বিতীয় অংশ সেখানে স্থাপিত করা হয়েছিল। ১৯৬০ সালের শেষ দিকে এবং ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্ক যেমন ইউকের এনপিএল, সিক্লিডিস, মেরিট নেটওয়ার্ক, টিমনেট এবং টেলেনেট এর অর্পানেটে, মার্ক I বিভিন্ন প্রোটোকল ব্যবহার করে উন্নত করা হয়। অর্পানেট বিশেষ নেতৃত্ব দেয় ইন্টারনেটওয়ার্কিং এর প্রোটোকলের উন্নয়নের জন্য, যেখানে নেটওয়ার্কসমূহের একাধিক পৃথক নেটওয়ার্ক একটি নেটওয়ার্কের সাথে যোগ করা যেতে পারে।

অর্পানেটের অ্যাক্সেসের জন্য ১৯৮১ সালে একে সম্প্রসারিত করা হয়, যখন ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) কম্পিউটার সাইন্স নেটওয়ার্কের (সিএসএনএটি) উন্নয়ন করে এবং আবার ১৯৮৬ সালে যখন এনএসএফনেট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সুপার কম্পিউটার সাইটগুলোতে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়। ১৯৮০ সালের শেষের দিকে এবং ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে বাণিজ্যিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীরা (আইএসপির) আবির্ভাব হতে থাকে। ১৯৯০ সালে অর্পানেট কর্মবিরত করা হয়। ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেটকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়, যখন এনএসএফনেট কর্মবিরত হয়, ইন্টারনেট ব্যবহারের বাণিজ্যিক বহন শেষ নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে ফেলা হয়।

১৯৯০ সালের মাঝামাঝি থেকে, ইন্টারনেট সংস্কৃতিতে ও বাণিজ্যে এবং কাছাঁকাছি-তাৎক্ষণিক যোগাযোগ যেমন, ইলেকট্রনিক মেইল, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি) "ফোন কল", দ্বি-মুখ ইন্টারেক্টিভ ভিডিও কল এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবসহ ইন্টারনেট ফোরাম, ব্লগ, সামাজিক নেটওয়ার্কিং পরিষেবা এবং অনলাইনে কেনাকাটার ওয়েব সাইটসমূহে একটি বিপ্লবী প্রভাব বিস্তার করে।

গবেষণার এবং শিক্ষা সম্প্রদায় অব্যাহত বিকাশ এবং উন্নত নেটওয়ার্ক যেমন, এনএসএফস'র অতি উচ্চ-দ্রুতগতির ব্যাকবোন নেটওয়ার্ক পরিষেবা (ভিবিএনএস), ইন্টারনেট২ এবং জাতীয় ল্যামডারেল ব্যবহার করে। বড় ধরনের তথ্য আদান-প্রদান হয়ে থাকে উচ্চতর গতিসম্পন্ন ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মধ্যে যা ১-Gbit/s, ১০-Gbit/s, বা আরও বেশি হয়।

আজ ইন্টারনেট অনলাইন তথ্য, ব্যবসা, বিনোদন এবং সামাজিক নেটওয়ার্কিং এর জন্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন