গত ৮ শতাব্দীর প্রতিটিতেই প্রাই একই সময়ে এসেছে নতুন নতুন মহামারি। জীবন গেছে কোটি কোটি মানুষের। আর আর্শ্চয়ের বিষয় হল গত ৪ শতকের প্রতি ২০ সালেই আঘাত হেনেছে এই মহামারির দৈত্য।
১৭২০ সালের প্লেগ: ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু
১৮২০ সালের কলেরা: লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি
১৯২০ সালের স্প্যানিস ফ্লু: মারা যায় ৫ কোটি মানুষ
২০২০ সালের করোনাভাইরাস : মৃত্যুর হার চলমান
১৭২০ সালের প্লেগ: জীবন হরণ করা এ মৃত্যুর নাম ‘দ্য ব্ল্যাক ডেথ’ বা কালো মৃত্যু। রোগের নাম প্লেগ। পৃথিবীর ইতিহাস একক কারণে এত মৃত্যু দেখেনি—ইউরোপ হারিয়েছে তার তখনকার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধাংশ। ১৭২০ সাল থেকে পরবর্তী ২ বছরে গ্রেট প্লেগ অব মার্সেইতে ১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ফ্রান্সে শুধু মার্সেই শহরে মারা যান ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। ফ্রান্সের জন্মহার প্রায় ৪৫ বছরের জন্য কমে গিয়েছিল এই প্লেগের প্রভাবে।
মধ্যযুগীয় ইতিহাস গবেষক ফিলিপ ডেইলিভার তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, চার বছর মেয়াদি প্লেগ মড়কে ইউরোপের ৪৫-৫০ ভাগ জনসংখ্যা বিলীন হয়ে যায়, যা প্রায় ২০ কোটি। তবে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় এ হিসাবের তারতম্য দেখা যায়। যেমন ইতালি, দক্ষিণ ফ্রান্স ও স্পেনে ৭৫-৮০ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়; কিন্তু জার্মানি ও ইংল্যান্ডে জনসংখ্যার ২০ ভাগ প্লেগের বলি হয়।
১৮২০ সালের কলেরা: ১৮০০ সাল থেকে সারাবিশ্বে কলেরা মহামারি শুরু হয়েছে। এটি অতি মহামারি আকার ধারণ করে ১৮১৭ সালে। ১৮২৪ সাল পর্যন্ত এর প্রভাব থাকলেও ১৮২০ সালে তা সর্বোচ্চ আকার ধারণ করে। এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ কলেরায় প্রাণ হারিয়েছেন। তবে ১৮২০ সালে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কলেরায় আক্রান্ত এলাকার দৃশ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন। ২০ সালে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কলেরায় আক্রান্ত এলাকার দৃশ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন। এশিয়াটিক কলেরা নামে পরিচিত এই অতি মহামারি শুরু হয় কলকাতার ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে। পরে তা প্রায় অর্ধেক বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
এতটাই মহামারি ছিল যে- চীন, রাশিয়া ও ভারতে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ শতকে কলেরা সবচেয়ে বড় আঘাত হানে। এতে দুই দশকে দেশটির প্রায় ৮ লাখ মানুষ প্রাণ হারান।
১৯২০ সালের স্প্যানিস ফ্লু: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত না শুকাতেই পৃথিবীজুড়ে শুরু হয়েছিল নতুন আরেক যুদ্ধ। সারা পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইল এক মরণব্যাধি, নাম ‘স্প্যানিস ফ্লু’। ‘স্প্যানিস ফ্লু’ নামের সেই মহামারীতে পরের দুই বছরে সারা পৃথিবীতে মানুষ মারা গেলেন চারকোটির বেশি। স্প্যানিশ ফ্লু নামে নতুন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ কানসাসের আমেরিকান সেনা সদস্যদের মধ্যে। পরে ঝড়ের গতিতে ছড়াতে শুরু করলো সেই জ্বর। সারা পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইল এই মরণব্যাধি। পরের দুই বছরে সারা পৃথিবীতে প্রাণহানি হয় কমপক্ষে ৫ কোটি মানুষের।
উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে আক্রমণ হলেও সারা পৃথিবীর কোনো দেশই মুক্তি পায়নি এ জ্বরের ছোবল থেকে। স্প্যানিস ফ্লু দ্বিতীয় দফা আসে ১৯১৯ সালের বসন্তে। কোনো কোনো জায়গায় তৃতীয়বারের ধাক্কাও এসেছিল, আর সেটার সময় ছিল ১৯২০ সালে।
২০২০ সালের করোনাভাইরাস : কোভিড-১৯ রোগটি প্রতি শতকের ২০ সালে মহামারির সঙ্গে মিল থাকার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নির্দিষ্ট ভাইরাস মৌসুমী হলেও এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই যে প্রতি শতাব্দীতে একবার ভাইরাল মহামারি ঘটে।
এ প্রসঙ্গে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত ডা. সুসান মারকাদো বলেছেন, ‘কোনো মিল নেই। তবে আপনি যদি কিছু ভাইরাস সত্যিই মৌসুমী কিনা তা জিজ্ঞাসা করছেন,তবে হ্যা মিল আছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘কিছু রোগের মহামারি বারবার ঘটে। তবে কোভিড-১৯ মহামারি একটি অজ্ঞাত এবং সম্পূর্ণ নতুন রোগ।’
তথ্যসুত্র: প্রাইম নিউজ বিডি, ডেইলি বাংলাদেশ ও অনান্য ইন্টারনেট সাইট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন