মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলায় এগারোটি সেক্টর

 এগারোটি সেক্টর:-

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধগুলো ছিল পরিকল্পনাহীন অপ্রস্তুত। ২৬ মার্চ সারা দেশে প্রতিরোধ শুরু হয় এবং এপ্রিলের শুরুতেই প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু অস্ত্রপ্রাপ্তি প্রশিক্ষণ - এই দুইয়ের ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই পরিকল্পিত রূপ পেতে পেতে জুন মাস পার হয়ে যায়। ১১ জুলাই বাংলাদেশের সামরিক কমান্ড তৈরি করা হয়। কর্নেল (অবঃ) মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) আব্দুর রবকে উপসেনাপতি এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন (সক্রিয়) আব্দুল করিম খন্দকারকে দ্বিতীয় উপসেনাপতির বিমান বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশকে সর্বমোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রতিটি সেক্টরের জন্যে একজন করে অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়।

 


 

১নং সেক্টর

চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফেনী নদী পর্যন্ত

মেজর জিয়াউর রহমান (এপ্রিল - জুন)

মেজর রফিকুল ইসলাম (জুন-ডিসেম্বর)

 

২নং সেক্টর

নোয়াখালী জেলা, কুমিল্লা জেলার আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত এবং ফরিদপুর ঢাকার অংশবিশেষ

মেজর খালেদ মোশাররফ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)

মেজর .টি.এম. হায়দার (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)

 

৩নং সেক্টর

সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, কিশোরগঞ্জ মহকুমা, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে কুমিল্লা ঢাকা জেলার অংশবিশেষ

মেজর কে.এম. শফিউল্লাহ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)

মেজর .এন.এম. নুরুজ্জামান (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)

 

 

৪নং সেক্টর

সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব উত্তর দিকে সিলেট-ডাউকি সড়ক পর্যন্ত

মেজর সি.আর. দত্ত

 

 

৫নং সেক্টর

সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সিলেট জেলার সমগ্র উত্তর পশ্চিমাঞ্চল

মীর শওকত আলী

 

 

৬নং সেক্টর

সমগ্র রংপুর জেলা এবং দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা

উইং কমান্ডার এম.কে. বাশার

 

৭নং সেক্টর

দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বগুড়া, রাজশাহী এবং পাবনা জেলা

মেজর কাজী নুরুজ্জামান

 

 

৮নং সেক্টর

সমগ্র কুষ্টিয়া যশোর জেলা, ফরিদপুরের অধিকাংশ এলাকা এবং দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়কের উত্তরাংশ

মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (এপ্রিল- আগস্ট)

মেজর এম.. মনজুর (আগস্ট-ডিসেম্বর)

 

 

৯নং সেক্টর

দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল এবং সমগ্র বরিশাল পটুয়াখালী জেলা

মেজর এম.. জলিল (এপ্রিল-ডিসেম্বর প্রথমার্ধ)

মেজর জয়নুল আবেদীন (ডিসেম্বরের অবশিষ্ট দিন)

 

১০নং সেক্টর

কোনো আঞ্চলিক সীমানা নেই। নৌবাহিনীর কমান্ডো দ্বারা গঠিত। শত্রুপক্ষের নৌযান ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো হত

 

 

১১নং সেক্টর

কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল জেলা এবং নগরবাড়ি-আরিচা থকে ফুলছড়ি-বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত যমুনা নদী তীর অঞ্চল

মেজর জিয়াউর রহমান (জুন - অক্টোবর)

মেজর আবু তাহের (অক্টোবর-নভেম্বর)

ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম হামিদুল্লাহ (নভেম্বর-ডিসেম্বর)

 

 

টাঙ্গাইল সেক্টর

সমগ্র টাঙ্গাইল জেলা ছাড়াও ময়মনসিংহ ঢাকা জেলার অংশ

কাদের সিদ্দিকী

 

আকাশপথ

বাংলাদেশের সমগ্র আকাশসীমা

গ্রুপ ক্যাপ্টেন .কে. খন্দকার

 

 

১০ নং সেক্টরটি ছিল কমান্ডার-ইন-চিফের (সি-ইন-সি) সরাসরি তত্ত্বাবধানে, যার মধ্যে নৌ-বাহিনী সি-ইন-সির বিশেষ বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে উপযুক্ত কোন কর্মকর্তা ছিলেন না বলে ১১ নং সেক্টরের (নৌ সেক্টর) কোন সেক্টর অধিনায়ক ছিল না; সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যখন যে সেক্টরে অভিযান চালাতেন, তখন সে সেক্টরের সেক্টর অধিনায়কের অধীনে থাকতেন।মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগ প্রশিক্ষণ শিবির ছিল সীমান্ত এলাকায় এবং ভারতের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ লাভ করত। সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করার জন্যে তিনটি ব্রিগেড (১১ ব্যাটালিয়ন) তৈরি করা হয়। এছাড়াও প্রায় ,০০০ মুক্তিযোদ্ধাকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের ভেতরে নিয়মিত বিভিন্ন অভিযানে পাঠানো হতো।

 

আগস্ট মাস থেকে শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক নৌ-আক্রমণ। ইতিহাসে আক্রমণ অপারেশন জ্যাকপট নামে পরিচিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন