ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১

 

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ

মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে ক্রমান্বয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে উপায়ান্তর না দেখে ঘটনা ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে তারা ডিসেম্বরের তারিখ ভারতের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক রূপ দেয়ার প্রচেষ্টা চালায়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় রেডিও পাকিস্তান সংক্ষিপ্ত এক বিশেষ সংবাদ প্রচার করে যেভারত পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তজুড়ে আক্রমণ শুরু করেছে। বিস্তারিত খবর এখনো আসছে।পাঁচটা মিনিটে পেশোয়ার বিমানবন্দর থেকে ১২টি যুদ্ধবিমান উড়ে যায় কাশ্মীরের শ্রীনগর অনন্তপুরের উদ্দেশ্যে এবং সারগোদা বিমানঘাঁটি থেকে আটটি মিরেজ বিমান উড়ে যায় অমৃতসর পাঠানকোটের দিকে।

 


 

দুটি যুদ্ধবিমান বিশেষভাবে প্রেরিত হয় ভারতীয় ভূখণ্ডের গভীরে আগ্রায় আঘাত করার উদ্দেশ্যে। মোট ৩২টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এই আক্রমণে। ডিসেম্বর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বক্তৃতাদানকালে ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তানের উল্লিখিত বিমান-আক্রমণ শুরু হয়। অবিলম্বে তিনি দিল্লী প্রত্যাবর্তন করেন। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর মধ্যরাত্রির কিছু পরে বেতার বক্তৃতায় তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলেন, এতদিন ধরেবাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।ভারতও এর জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 'যুদ্ধাবস্থা' ঘোষণা করে এবং তাদের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করে।

ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় স্থলবাহিনীর সম্মুখ অভিযান শুরু হয় চারটি অঞ্চল থেকে:

() পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে তিন ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৪র্থ কোর সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা-নোয়াখালী অভিমুখে;

() উত্তরাঞ্চল থেকে দুই ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ৩৩তম কোর রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া অভিমুখে;

() পশ্চিমাঞ্চল থেকে দুই ডিভিশনের সমবায়ে গঠিত ২য় কোর যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর অভিমুখে; এবং

() মেঘালয় রাজ্যের তুরা থেকে ডিভিশন অপেক্ষা কম আরেকটি বাহিনী জামালপুর-ময়মনসিংহ অভিমুখে।

যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে সারা দেশের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে পাকিস্তানিরা পিছু হটতে শুরু করে। একের পর এক পাকিস্তানি ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানিরা অল্প কিছু জায়গায় তাদের সামরিক শক্তি জড় করেছিল; যৌথবাহিনী তাদের এড়িয়ে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশের জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় যৌথবাহিনী ঢাকার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। এর আগেই বিমান হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীকে পরাস্ত করে ঢাকার সকল সামরিক বিমান ঘাঁটির রানওয়ে বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়। তৎকালীন পাকিস্তানি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আশ্বাস পেয়েছিলেন উত্তরে চীন দক্ষিণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাঁদের জন্য সহায়তা আসবে, কিন্তু বাস্তবে তার দেখা মেলে নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন