স্মার্টফোন কেনার আগে যে বিষয় বিবেচনা করবেন ।


প্রত্যেক দিনের ব্যস্ততম জীবনে মোবাইল ফোন অবিছিন্ন সঙ্গী  । যোগাযোগ, ছবি তোলা, ক্লাউডে তথ্য সংরক্ষণ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ছাড়াও স্মার্টফোন পাওয়ার ব্যাংক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এখন নানা রকম স্মার্টফোন কিনতে পাওয়া যায় ফলে ফোন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশ কঠিন। বাজারে অত্যাধুনিক ফিচারের ফোনগুলো তা আরও কঠিন করে তুলেছে। ফলে স্মার্টফোন কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা ভাল যা আপনার ভবিষ্যত ফোন ব্যবহারকে তুলনামূলক সুরক্ষিত করে তুলবে।
যে বিষয় গুলো বিবেচনা করবেন:-

ফোনের কাঠামো বাজারে সাধারণত প্লাস্টিক ও ধাতব কাঠামোর ফোন পাবেন। কিছু ফোনে কাচের কোট দেওয়া আছে। যাঁদের হাত থেকে জিনিস প্রায় সময় পড়ে যায়, তাঁরা ধাতব বা প্লাস্টিকের ফোন কিনুন। এ ধরনের ফোনগুলো দুই থেকে তিন ফুট ওপর থেকে পড়লেও টিকে যেতে পারে। আর সম্ভব হলে সেফটির জন্য কাভার ব্যবহার করতে পারেন।

কোম্পানি ও ওয়ারেন্টি
কোন কোম্পানির ফোন কিছেন তা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। সস্তার তিন অবস্থা তাই কম দামের ফোন কিনলেও ওয়ারেন্টি আছে এমন ফোন বাছায় করুন।

ডিসপ্লে
প্রয়োজন অনুসারে ডিসপ্লে বাছায় করুন। মেয়েরা সাধারণত বড় ডিসপ্লের ফোন পছন্দ করেন। আর ছেলেরা মাঝারি। স্মার্ট ফোনগুলোর  ডিসপ্লের রেজুলেশন সাধারনত দামের এবং প্রস্তুতকরারক কোম্পানির উপর নির্ভর করে। তাই সম্ভব হলে ফোন কেনার আগে ফিচার দেখে নিন এবং বেশি রেজুলেশন সম্পন্ন মোবাইল কিনুন। বর্তমানে গোরিলা গ্লাস ডিসপ্লে বেশ ব্যবহার হচ্ছে। যদি আপনার ফোনের ডিসপ্লে গোরিলা গ্লাসের না হয় তবে একটি গোরিলা স্কীন পোটেক্টর লাগিয়ে নিন।

প্রসেসর
অপারেটিং সিস্টেমের সংস্করণ, ইউজার ইন্টারফেস, বোল্টওয়্যারের মতো নানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে স্মার্টফোনের প্রসেসিংয়ের ক্ষমতার পার্থক্য হয়। যাঁরা স্মার্টফোনে ছবি বা ভিডিও সম্পাদনা, ডকুমেন্ট সম্পাদনা, ভারী গেম খেলা, ভিডিও স্ট্রিমিং ও স্ক্রিনে একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাঁরা কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন ৬৫২ বা স্ন্যাপড্রাগন ৮২০/৮২১ প্রসেসরের ফোন নিতে পারেন। এতে মাল্টিটাস্কিং-সুবিধা পাওয়া যায়। আর যাঁরা স্মার্টফোন হালকা কাজে ব্যবহার করেন, তাঁরা মিডিয়াটিক প্রসেসর ব্যবহার করতে পারেন।

ক্যামেরা
ফোনে বেশি মেগাপিক্সেল থাকা মানেই কিন্তু সে ফোনের ক্যামেরা ভালো নয়। ক্যামেরার অ্যাপারচার, আইএসও, পিক্সেলের আকার ও অটোফোকাসের মতো বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ। অধিকসংখ্যক পিক্সেল থাকা মানে ছবির আকার বড় হওয়া। অর্থাৎ, ছোট স্ক্রিনে ছবি আরও শার্প হওয়া। উৎসাহী আলোকচিত্রীরা অবশ্যই ক্যামেরার অ্যাপারচারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবেন। ১২ মেগাপিক্সেল বা ১৬ মেগাপিক্সেলের সেন্সরের সঙ্গে অ্যাপারচার f/2.0 বা তার নিচে হলে কম আলোতেও ভালো ছবি উঠবে। যাঁরা সাধারণ ছবি তোলেন, তাঁরা অবশ্য ৮ বা ১২ মেগাপিক্সেলের সেন্সরের সঙ্গে অ্যাপারচার f/2.0 বা f/2.2 দেখে নিতে পারেন।

ব্যাটারি
ফোন কতটা কাজে লাগান, তার ওপর নির্ভর করে ব্যাটারি ক্ষমতা দেখে নিতে হবে। যাঁরা বেশি বেশি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন, গেম খেলেন বা ভিডিও দেখেন, তাঁরা স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার বা তার চেয়েও বেশি ক্ষমতার ব্যাটারি নেবেন। যাঁরা গড়পড়তা বা হালকা ব্যবহারকারী, তাঁদের জন্য তিন হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারিতে কাজ চলে যাবে।

অপারেটিং সিস্টেম
এখনকার স্মার্টফোন কেনার আগে অপারেটিং সিস্টেমের সংস্করণ ও ইউজার ইন্টারফেসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ইউজার ইন্টাফেস ব্যবহার করে বারবার কাজ করা হয়, তাই এটি যত সহজ ও সাধারণ হয় ততই ভালো। নিখুঁত অ্যান্ড্রয়েডের অভিজ্ঞতা পেতে মটোরোলা, নেক্সাস/পিক্সেল, অ্যান্ড্রয়েড ওয়ানচালিত ডিভাইসগুলো ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া জেনইউআই, এক্সপেরিয়া ইউআই, স্যামসাং টাচউইজ, ইএমইউআইয়ের মতো ইন্টারফেসগুলোও ব্যবহারবান্ধব। অন্য দিকে তথ্য ও ভাইরাস দুরে রাখেত উইনডোজ বা এইএসও ফোন ব্যবহার করতে পারেন।

স্টোরেজ
স্মার্টফোনের স্টোরেজ বিবেচনায় ধরলে এর বেশির ভাগ জায়গা দখল করে থাকে অপারেটিং সিস্টেম ও প্রি-ইনস্টল করা অ্যাপগুলো। এ ছাড়া যেসব ফোনে ১৬ জিবি, ৩২ জিবি বা ৬৪ জিবি জায়গার কথা বলা হয়, আসলে তাতে ওই পরিমাণ জায়গা থাকে না। যাঁরা স্মার্টফোনে অল্প অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাঁরা ৩১ জিবি স্টোরেজ আছেএমন স্মার্টফোন নিতে পারেন। যাঁরা বেশি অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাঁরা ৬৪ বা ১২৮ জিবি স্টোরেজ আছেএমন স্মার্টফোন পছন্দ করবেন। ১৬ জিবি স্টোরেজের স্মার্টফোন কিনলে তাতে মাইক্রোএসডি সমর্থন করে কি না, তা দেখে নেবেন।

নিরাপত্তা
এখনকার বেশির ভাগ ফোনেই বাড়তি নিরাপত্তা ফিচার থাকে। যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আইরিশ সেনসর। এসব ফিচার কেবল ফোন লক-আনলকের কাজেই নয়, বরং নির্দিষ্ট ফাইলে পাসওয়ার্ড দিতেও ব্যবহার করা যায়। এখনো আইরিশ স্ক্যানারের ফোন ততটা সহজলভ্য নয় বলে অন্তত বাড়তি নিরাপত্তা ফিচার আছেএমন ফোনগুলো দেখতে পারেন।

স্পিকার
এখনকার ফোন কেনার আগে অবশ্যই অডিওর মান দেখে নেবেন। কারণ, যাঁরা ভিডিও কনফারেন্স বা ভিডিও স্ট্রিমিং করেন, তাঁদের জন্য অডিওর মান ভালো হওয়া দরকার। যাঁরা চলতি পথে বিনোদন পছন্দ করেন, তাঁরা সামনের দিকে স্পিকারযুক্ত ফোন কিনতে পারেন। যাঁরা সাধারণ কাজে ফোন ব্যবহার করবেন, তাঁদের জন্য পেছনে স্পিকারযুক্ত স্মার্টফোন কিনলেও সমস্যা নেই।

হেডফোন জ্যাক
স্মার্টফোনে কোন ধরনের পোর্ট ব্যবহৃত হচ্ছে, তা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। এখনকার স্মার্টফোনে মাইক্রো ইউএসবি ও ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট পাওয়া যায়। সুবিধার কথা বিবেচনায় ইউএসবি টাইপ-সি বেছে নেওয়া ঠিক হবে। কারণ, এটি প্লাগ ইন করা সহজ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পোর্টের ব্যবহার বাড়বে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন