আরব বসন্ত



আরব বসন্ত বিপ্লব নয়, কয়েকদফা গণবিদ্রোহ মাত্র। আরব বসন্ত একটা জাগরণের নাম। সেই জাগরণ চেতনার রাজ্যে। এটাই আরব বসন্তের এক মস্ত ইতিবাচক দিক। সেই চেতনা রাজনীতিগতভাবে যত শাণিত হবে এবং সুগঠিত রূপ নেবে ততই তা বিপ্লবের সম্ভাবনায় অগ্নিগর্ভ হবে।

সে জাগরণের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল স্বৈরশাসকদের লৌহ-আসন। আরবেরা স্বপ্ন দেখেছিল‍— বেকারত্ব, ঘুষ, দুর্নীতি, নিপীড়ন, বঞ্চনার অবসান ঘটে এবার গণতন্ত্র আসবে। দুর্বিনীত শাসকদের যূপকাষ্ঠে আর পাঁঠার বলি হবে না সাধারণ মানুষ।

 

আরব বিশ্বকে আমূল বদলে দেয়া আন্দোলনের কথা মাথায় রেখেই কি নীতিনির্ধারকদের এমন সতর্কতা। ২০১০ সালের শুরু থেকে আরব বিশ্বে গণবিপ্লবের ঝড়কে পশ্চিমা মিডিয়া আরব বসন্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে।

২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিজের গায়ে আগুন জ্বেলে বিপ্লবের মশাল জ্বেলে দেন তিউনিসিয়ার ফেরিওয়ালা বাওয়াজিজি। ঘুষ, দুর্নীতি, বেকারত্ব, রাজনৈতিক নিপীড়ন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তা ছিল এক জ্বলন্ত বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের আগুন আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এসব দেশ হচ্ছে তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন সিরিয়া। বিদ্রোহের সে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় স্বৈরশাসক জয়নাল আবেদিন বেন আলীর ক্ষমতার আসন। ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু বেন আলীকে হটিয়েও পাঁচ বছরে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি দেশের সার্বিক পিরিস্থিতি।

তিউনিসিয়ায় বিপ্লবের সফল পরিণতি উজ্জীবিত করে হোসনি মোবারকের স্বৈরশাসনে নিষ্পেষিত মিসরের সাধারণ মানুষকে। ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি সে দেশেও বিপ্লবের গণজাগরণ সৃষ্টি করে। কাররোর তাহরির স্কয়ার পরিণত হয় মুক্তিকামী মানুষের জনসমুদ্রে।  ১৮ দিনের টানা বিক্ষোভের পরিণতিতে প্রায় ৮৫০ জন মানুষের রক্ত ঝরিয়ে এই বিপ্লবও সাফল্যের মুখ দেখে। ১১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন মোবারক।

 

পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামপন্থী ব্রাদারহুড ক্ষমতায় এলেও তা বেশি দিন টেকসই হয়নি। মূলত ব্রাদারহুড়-সমর্থিত মোহাম্মদ মুরসির ক্ষমতালিপ্সাই তাঁর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৩ সালে সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি ক্ষমতা কেড়ে নেন মুরসির কাছ থেকে। এখন সিসির বজ্রশাসনে আগের মতোই লৌহবন্ধনীর ভেতর কাটছে মিসরীয় মানুষরে জীবন। ২০১৪ সালে নতুন সংবিধান দেশের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বাড়িয়েছে।  মোবারকের চেয়েও কঠোর হস্তে দেশ শাসন করছেন সিসি। বিক্ষোভ করা দূরে থাক, কারও কোনো টুঁ শব্দটি করার সাহস নেই।

ইয়েমেনের অবস্থাও টালমাটাল। আরব বসন্তের জেরে ২০১১ সালের শেষ দিকে দীর্ঘ সময়ের স্বৈরশাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহ পদত্যাগ করলেও সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটিতে সংখ্যালঘু সুন্নি শাসকদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়ারা বিদ্রোহ-বিক্ষোভ করে আসছে।

 

আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় আরব বিশ্বের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। সেখানে বিক্ষোভ ছিল মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিদেশের সামরিক হস্তক্ষেপ বিভিন্ন দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। সন্ত্রাস বাড়িয়েছে।

 

গণবিক্ষোভের শুরু মিশরে; এরপর তা লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যায়। প্রথমে মিশরে প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পতন হয়। পরে লিবিয়ায় মুয়াম্মর আল-গাদ্দাফি জামানার অবসান হয়। আরব বিশ্বের এই গনঅভ্যূত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর ইউরোপীয় ন্যাটোভুক্ত সহচর রাষ্ট্রগুলো অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সরাসরি আঘাত হেনে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনায়কের পতন ঘটায়। এক হিসাবে বলা হয় আরব বসন্তের ফলে মাত্র পৌনে দুই বছরে লিবিয়া, সিরিয়া, মিশর, তিউনিসিয়া, বাহরাইন ইয়েমেনের গণ-আন্দোলনের ফলে মোট দেশজ উৎপাদনের ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার ৫৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বর ২০১০ থেকে মধ্যপ্রাচ্য উত্তর আফ্রিকায় যে গণ বিদ্রোহ বিক্ষোভ প্রদর্শন হচ্ছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। পর্যন্ত আলজেরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, মিশর, ইরান, জর্ডান, লিবিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়ায় বড় ধরনের বিদ্রোহ হয়েছে এবং ইরাক, কুয়েত, মৌরিতানিয়া, ওমান, সৌদি-আরব, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়াতে ছোট আকারের ঘটনা ঘটেছে। এসব বিদ্রোহে প্রতিবাদের ভাষারূপে গণবিদ্রোহের অংশ হিসেবে হরতাল, বিক্ষোভ প্রদর্শন, জনসভা, ্যালি প্রভৃতি কর্মসুচী নেয়া হয়।

 

দেশব্যাপী সাংগঠনিক কাজ, যোগাযোগ এবং রাষ্ট্রীয় প্রচারণার থেকে জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে ফেসবুক, টুইটারের মত সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহৃত হয়। এরই মধ্যে তিউনিসিয়া, মিশরে বিদ্রোহের ফলে শাসকের পতন হয়েছে বলে এখানে তা বিপ্লব বলে অভিহিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন কারণে এমন বিদ্রোহের সূচনা হয় যার মধ্যে সরকারি দুর্নীতি, স্বৈরতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বেকারত্ব এবং চরম দারিদ্র্যের অভিযোগের পাশাপাশি বিশাল যুবসমাজের অংশগ্রহণও অণুঘটকরূপে কাজ করেছে। এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং খরার প্রকোপও বড় কারণ।

 

১৮ ডিসেম্বর তিউনিসিয়ায় মোহাম্মদ বোয়াজিজির পুলিশে দুর্নীতি দুর্ব্যবহারে প্রতিবাদে আত্মাহুতির মাধ্যমে বিদ্রোহ শুরু হয়। তিউনিসিয়ার বিপ্লব সফল হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও আত্মাহুতির কারণে অস্থিরতা শুরু হয় যার ফলে আলজেরিয়া, জর্ডান, মিশর ইয়েমেনে বিদ্রোহ শুরু হয়।

 

তিউনিসিয়ায় জেসমিন বিপ্লবের ফলে ১৪ জানুয়ারি শাসক জেন এল আবেদিন বেন আলির পতন ঘটে এবং তিনি সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ২৫ জানুয়ারি থেকে মিশরে বিদ্রোহ শুরু হয় এবং ১৮ দিনব্যাপী বিদ্রোহের পরে ৩০ বছর ধরে শাসন করা প্রেসিডেন্ট মুবারক ১১ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন। একই সাথে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেন; ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি আলি আব্দুল্লাহ সালেহ ঘোষণা দেন যে তিনি ২০১৩ সালের পর আর রাষ্ট্রপতি থাকবেন না যা তখন ৩৫ বছরের শাসন হবে।

 

বর্তমানে লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে পতনের চেষ্টা হচ্ছে এবং সুদানের রাষ্ট্রপতি আলি আব্দুল্লাহ সালেহ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি ২০১৫ এর পর নির্বাচনে অংশ নেবেন না ।এরূপ স্বতস্ফূর্ত গণবিক্ষোভ এবং এসব দেশের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে তা আজ গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের কারণ।


আরব বিশ্বে গণবিক্ষোভের শুরু মিশরে। মাত্র ১৭ দিনে পতন হয় প্রেসিডেণ্ট হোসনি মোবারকের ৩০ বছরের প্রতাপশালী শাসন। ২০১০-এর শুরুতে ২৫শে জানুয়ারি প্রথম গণবিক্ষোভ ছিল মিশরীয় জনগণের দীর্ঘকালের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। ১৭ দিন গণআন্দোলনের পর ১১ই ফেব্রুয়ারি হোসনি মোবারকের পতন হয়। দিন মিশরের সমস্ত মানুষ স্বৈরাচারি হোসনি মোবারকের অপসারণের দাবিতে গণবিক্ষোভে ফেটে পড়লে নব নিযুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সোলাইমান টেলিভিশন ভাষণে হোসনি মোবারকের ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবার ঘোষণা দেন।

 

প্রেসিডেন্টের পদ থেকে হোসনি মোবারকের সরে দাঁড়ানোর খবর মিশরবাসী উল্লাসে ফেটে পড়ে। ১৯৮১ সালে হোসনি মোবারক ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিশরে কার্যত সেনাবাহিন সমর্থিত একনায়কতন্ত্র সূচনা হয়। পশ্চিমা দেশগুলো যারা শুরু থেকেই হোসনি মোবারককে নি:শর্তভাবে সমর্থন দিয়ে আসছিল, ক্ষমতা থেকে মোবারকের সরে দাঁড়ানোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়। মোবারক ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সামরিক উচ্চ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন তানতাভি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন। মূলত মিশরীয় সেনাবাহিনী মোবারকের পক্ষ ত্যাগ করে জনগণের পক্ষাবলম্ববন করার সিদ্ধান্ত নিলে দ্রুত পট পরিবর্তন ঘটে।

 

মিশরে হোসনি মোবারকের পতনকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হয়েছিল। কিন্তু ২০১১-এর শুরুতে আফ্রিকার অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি তিউনিশিয়ার গণঅভ্যূত্থানের ধারাবাহিকতাতেই যেন লিবিয়া, সিরিয়া, বাহরাইন প্রভৃতির গণ্যঅভ্যূত্থান। তিউনিশিয়ায় গণঅভ্যূথানে ২৪ বছরের একচ্ছত্র রাজত্বের "জাইন-এল আবেদিন বেন আলীর" পতন ঘটে। তিনি সৌদী আরবে পালিয়ে গিয়ে জীবন রক্ষা করেন।

 

লিবিয়ায় গণবিক্ষোভ চলে প্রায় মাস। ২০১১-এর ফেব্রুয়ারিতে গাদ্দাফিবিরোধী বিক্ষোভ লড়াই শুরু হয়। ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে দ্বিতীয় দেশের বৃহত্তম শহর বেনগাজিতে গাদ্দাফিবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বেনগাজিতে একটি থানার কাছে শত শত জনতা গাদ্দাফিবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। এতে সহিংসতায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। দিনটিকেদ্য ডে অব রিভোল্টবলা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি বেনগাজি শহর দখল করে নেয় বিদ্রোহীরা। এতে গাদ্দাফির অণুগত বাহিনী বিরোধীদের লড়াইয়ে কয়েক' মানুষ নিহত হয়।

 

এর পরও গাদ্দাফির অণুগত বাহিনী বেনগাজি পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েক সপ্তাহ লড়াই চালিয়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মার্চের ১০ তারিখে, গাদ্দাফি বাহিনী ব্রেগা শহরে বোমাবর্ষণ শুরু করে। বিদ্রোহীদের কাছ থেকে জায়িয়াহ বিন জাওয়াদ শহর পুনরুদ্ধার করে গাদ্দাফির সেনারা। এরপর ব্রেগা আজদাবিয়াহ শহরে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই চলে। ১৯শে মার্চ তারিখে পশ্চিমা বিশ্ব গাদ্দাফি পতনের লক্ষ্যে জন্য আক্রমণ চালায়। প্রথমে লিবিয়ায় বোমা নিক্ষেপ শুরু করে সামরিক জোট ন্যাটো। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিতর্কের পর লিবিয়ায় নো ফ্লাই জোন কার্যকরের প্রস্তাব পাস হয়।

 

১৫ সদস্যের পরিষদে স্থায়ী দুই সদস্যরাষ্ট্র রাশিয়া, চীনসহ পাঁচটি সদস্যরাষ্ট্র ভোটের সময় অনুপস্থিত থাকে। ১৫ই মে তারিখে গাদ্দাফি সাগর তীরের শহর মিসরাতা থেকে তাঁর বাহিনী প্রত্যাহার করে নেন। এর আগে কয়েক সপ্তাহ শহরটি অবরোধ করে রাখা হয়। সেখানে যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকসহ উভয় পক্ষের বহু সেনা হতাহত হয়। ১৫ই আগস্টে বিদ্রোহীরা রাজধানী ত্রিপোলির দিকে অভিযান শুরু করে। দ্রুত ত্রিপোলির ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের ঘরান এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহীরা। ২১শে আগস্ট তারিখে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে ঢুকে পড়তে সক্ষম হয় বিদ্রোহী বাহিনী। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলেগ্রিন স্কয়ারেপৌঁছে বিদ্রোহীরা। তারা ওই স্কয়ারের নাম পরিবর্তন করেশহীদ চত্বরনাম দেয়।

 

দুদিন পর ২৩শে আগস্ট গাদ্দাফির আবাসস্থলবাব আল-আজিজিয়া পতন। তবে সেখানে গাদ্দাফি বা তাঁর পরিবারের কাউকে খুঁজে পায়নি বিদ্রোহীরা। সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখে নাইজার জানায়, গাদ্দাফির ছেলে "সাদি গাদ্দাফি" সে দেশে প্রবেশ করেছে। ১৬ই সেপ্টেম্বর তারিখে লিবিয়ার একমাত্র বৈধ কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিদ্রোহীদের গঠিতন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিলকে (এনটিসি) সমর্থন দেয় জাতিসংঘ। ১৭ই অক্টোবর গাদ্দাফির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিতবনি ওয়ালিদদখল করতে সক্ষম হয় বিদ্রোহী বাহিনী। পরদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এক ঝটিকা সফরে লিবিয়ায় যান। তিনি বিদ্রোহীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। অক্টোবর ২০: সিরত শহরে লড়াইয়ে নিহত হন গাদ্দাফি।

 

যেসব দেশে বিক্ষোভ চলছে :-

.আলজেরিয়া      .বাহরাইন           .জিবুতি              .মিশর       .ইরান .ইরাক             .জর্ডান               .কুয়েত              .লিবিয়া ১০.মৌরিতানিয়া        ১১.সিরিয়া              ১২.সোমালিয়া       ১৩.সুদান  ১৪.তিউনিসিয়া        ১৫.ইয়েমেন          ১৬.মরক্কো           ১৭.পশ্চিম সাহারা ১৮.ওমান              ১৯.সৌদি আরব

 

 

মোহাম্মদ বোয়াজিজির আত্মাহুতির পরে আরব বিশ্বে আরো অনেকগুলো আত্মাহুতির ঘটনা ঘটে। আলজেরিয়ায় মহসিন বৌটারফিফ শহরের মেয়রের সাথে একটি আলোচনায় ব্যর্থ হবার পর ১৩ জানুয়ারি, ২০১১ আত্মাহুতি দেন এবং ২৪ জানুয়ারি, ২০১১ মারা যান। মিশরে আব্দোউ আব্দেল-মোনেম জাফর ১৭ জানুয়ারি মিশরের সংসদের সামনে আত্মাহুতি দেন। সৌদি আরবে একজন ৬৫ বছর বয়সী অজ্ঞাত ব্যক্তি ২১ জানুয়ারি আত্মাহুতি দেন মারা যান


কারণ :-

স্বৈরাচার বা চরম রাজতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি         ( উইকিলিকসের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া বিভিন্ন ফাইল ), দুর্বল অর্থনীতি, বেকারত্ব, চরম দারিদ্র্য শিক্ষিত হতাশাগ্রস্থ যুবসমাজ ইত্যাদি কারণে এইসব এলাকায় বিক্ষোভের সূচনা হয়। এছাড়াও এসব দেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে থাকায় তারা কয়েক দশক ধরে ক্ষমতায় ছিল, সম্পদের সুষম বণ্টন হয় নি, খরা খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।

ইন্টারনেট দিয়ে শুরু করা আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীরা অনেকেই পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত যেখানে স্বৈরতন্ত্র রাজতন্ত্রকে অচল বলে মনে করা হয়। এওসব দেশে সাম্প্রতিক কালে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষার হার বৃদ্ধির কারণে মানব উন্নয়ন সূচক এর উন্নতি হয়েছে কিন্তু তার সাথে সাথে সরকারের সংস্কার হয় নি। তিউনিসিয়া মিশরের অর্থনীতি তেলের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল ছিল না, যার ফলে সরকার বড় মাপের বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হয়।


নিউইয়র্কে 'আরব বসন্ত'

২০১১ সালের, সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ওয়াল স্ট্রিট দখল করো' আন্দোলন শুরু হয়। নিউইয়র্ক শহরে শুরু হয়ে এই আন্দোলন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক শহরেই নয়, ইউরোপের বিভিন্ন রাজধানী গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং বিশ্বের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়েছে। এই আন্দোলনের আওয়াজ হল, 'আমরাই ৯৯%', 'পুঁজিবাদ ধ্বংস হোক' নিউ ইয়র্কের এই 'ওয়াল স্ট্রিট দখল করো' গণআন্দোলনকে নিউ ইয়র্কের আরব বসন্ত হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন