করোনা ভাইরাস এর ভয়াবহ আক্রমনের কথা আমারা কে না জানি, বিশ্ব জুড়ে এখন এই মহামারি দমনে চলচে তোড়জোর। চলছে টিকা প্রদান কর্মসূচি। করোনা ভাইরাস এর টিকা নিলে কোন পাশ্বপতিক্রিয়া আছে কি না তা জানবার আগে চলুন জেনে নিই ভ্যাকসিন বা টিকা কী?
এই
অংশটি দেহে একই রকমের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে যা দেহের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পরবর্তীতে ওই ভাইরাসের আক্রমণ
শনাক্ত করতে সাহায্য করে এবং সেটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
টিকার
একটি আদি রূপ আবিষ্কৃত হয়েছিল ১০ম শতকে চীনে। তবে ১৭৯৬ সালের আগে এটি স্বীকৃতি পায়নি। সে বছর এডওয়ার্ড
জেনার দেখেন যে, কাউপক্স বা গোবসন্ত রোগের
মৃদু সংক্রমণ গুটি বসন্ত রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। তিনি তার এই তত্ত্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুই বছর পর গুটি বসন্তের
টিকা আবিষ্কার করেন এবং তখন থেকে ল্যাটিন শব্দ "ভ্যাকা" থেকে ভ্যাকসিন শব্দটির উৎপত্তি হয়। ল্যাটিন ভাষায় ভ্যাকা শব্দটির অর্থ হচ্ছে গরু।
করোনা
ভাইরাস টিকা :-
কোভিশিল্ড
দেয়া হলে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে এবং যে কোন রকম
করোনাভাইরাস দেহে ঢুকলে তাকে আক্রমণ করতে শিখে যায়। টিকা দেবার পর মানবদেহ করোনাভাইরাসের
জেনেটিক উপাদানগুলো চিনে নিতে এবং এ্যান্টিবডি ও টি-সেল
তৈরি করতে বেশ খানিকটা সময় নেয়। আপনি যদি কোভিড-১৯ এর টিকা
নিয়ে থাকেন তাহলে অন্য কোন টিকা নেয়ার আগে কমপক্ষে ১৪ দিন অপেক্ষা
করতে হবে। যেহেতু কোভিডের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এবং দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে তাই আক্রান্ত হোন আর না হোন,
টিকা নেয়া উচিৎ। তবে গর্ভবতী নারীরা করোনাভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন না।
প্রথম
ডোজ নেওয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহ পর
দ্বিতীয় ডোজটি দেয়া হয়।
বাংলাদেশে
প্রথম করোনাভাইরাস টিকা :-
সাতাশে
জানুয়ারি ২০২১ কুর্মিটোলা
হাসপাতালের সেবিকা রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো বাংলাদেশের করোনাভাইরাস টিকাদান কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে যোগদান করে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক
উদ্বোধন করেন। ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে।
করোনা
ভাইরাস টিকার পাশ্বপ্রতিক্রিয়া :-
বিশ্বের
কোথাও এখনো টিকা নেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি । এখন পর্যন্ত
বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন
একটা নিরাপদ ভ্যাকসিন।
তবে
ভ্যাকসিন নেয়ার পরে কারো কারো ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যেমন
ভ্যাকসিন প্রয়োগের জায়গায় ফুলে যাওয়া, ত্বক লাল হওয়া, সামান্য
জ্বর হওয়া, বমি বমি ভাব, মাথা ও শরীর ব্যথা
শীতল অনুভূতি, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি, অবসাদগ্রস্ততা।
তবে এগুলোকে টিকা শরীরে সাথে মানিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি বলেই ধরা হয়
প্রতি
১০ জনের মধ্যে একজনের মধ্যে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
দেখা দিতে পারে
টিকা
নেয়ার আগে চিকিৎসককে জানাতে হবে যে আপনার কোন
স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিনা বা আপনি কোন
রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন কিনা।
যেমন,
আগে কোন টিকায় তীব্র এলার্জি দেখা দেয়া, তীব্র জ্বরসহ অসুস্থতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, ক্যান্সারের
চিকিৎসা চলা, রক্তপাত বা আঘাতের কোন
সমস্যা থাকা, গুরুতর অসুস্থতা, গর্ভবতী বা শিশুকে বুকের
দুধ পান করাচ্ছে কিনা- এবিষয়গুলো জানা থাকতে হবে। তাহলে ধারণা করা যাবে যে টিকা এই
মুহূতে আপনার জন্য ঠিক কি না এবং
অতীতে যাদের কোন টিকা নেয়ার পর বড় ধরনের
অ্যালার্জি হয়েছে বা কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হয়েছে, তাদের টিকা নিতে হলে বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে।
• বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন টিকাই শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারে না। আর একবার টিকা নিলে কতদিন সুরক্ষা মিলবে সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আর তাই এখনো পরামর্শ হিসেবে বলা হচ্ছে যে, টিকা নিলেও যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়।
• টিকা নেয়ার কারণে কেউ কোভিডে আক্রান্ত হবে না। কারণ এ পর্যন্ত যে
টিকাগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাদের কোনটিতেই জীবন্ত ভাইরাস নেই।
• টিকা নেয়া লোকেরা কি ভাইরাস ছড়াতে
পারে, আপনি হতে পারেন জীবানুর বাহক। আপনি কোন স্থানে স্পর্শ করলে এবং সেখানে যদি ভাইরাস থাকে তাহলে আপনার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। আপনি আপনি সচেতন থাকলে আপনার আশেপাশের মানুষ বেশ নিরাপদে থাকতে পারে।
টিকা
নেওয়ার পর কি করবেন
:-
• ভ্যাকসিন নেয়ার পর টিকা কেন্দ্রে
৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন
• ভ্যাকসিন নেয়ার পর যে কোন
শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা বা শারীরিক সমস্যা
দেখা দিলে নির্ধারিত স্বাস্থ্যকর্মী/চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন।
• ভ্যাকসিন নেয়ার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
তথ্যচুরি :-
বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হবে,
টেলিফোনে এমন প্রস্তাব রেখে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। টিকা
রেজিস্ট্রেশনে সহায়তার কথা বলে অনেকের মোবাইল ফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে, অনেকের মোবাইল থেকে টাকা গায়েব করে দেয়া হয়েছে । কোভিড-১৯
এর টিকা নিবন্ধনের জন্য গ্রাহকের নাম, বয়স, ফোন নম্বর, ঠিকানা, ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। আপনার ফোনে ওটিপি আসবে, সেটা বললেই নাম নিবন্ধন হয়ে যাবে ।আর যখনই ওটিপি বলে দেন, তখনই তাদের বিকাশ,
নগদ, বা রকেটের অ্যাকাউন্টে
টাকা হাওয়া হয়ে যাবে।
পুলিশের পরামর্শ:-
অপরিচিত
কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য জানাবেন না
অপরিচিত
কোন কল, মেসেজ বা ইমেইলে সাড়া
দেবেন না
তথ্যসুত্র: বিবিসি বাংলা সংবাদ ও অনান্য ওয়েবসাইট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন